পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার পুরনায়ী ܐܬܦܠܛ এইটুকু আধা বঁধুতে নাই। এই জন্য বৈষ্ণব কবিদের সমস্ত উপাদানে সমৃদ্ধ হইয়া-বঁাশীর সুরের মোহিনী এমন ললিত সুন্দর কবিতায় লিখিয়াও পল্লী-গীতিকার কবি বৈষ্ণব মহাজনের পংক্তিতে স্থান পান নাই । কিন্তু প্রেমের যে ত্যাগমূলক মহিমা তিনি কীৰ্ত্তন করিয়াছেন, তাহা অধ্যাত্মবাদীর চােখে পূর্ণ চিত্র বলিয়া গৃহীত না হইলেও উহা বাস্তব-বাদীদের চরম আদর্শে পৌছিয়াছে ; র্যাহারা মনে করেন-বৈষ্ণব পদ প্ৰহেলিকাময়, উহা সাম্প্রদায়িক, জটিল তথ্যের মধ্যে আত্ম-প্ৰকাশ করিয়াছে, তঁাহারা আধা বঁধুর সরল পার্থিব পথ সুগম ও সহজ পন্থা বলিয়া আদর করিবেনএই পথ স্বৰ্গে পৌছিবার ভরসা দেয় না ; প্রেমের আনন্দও এখানে উন্নত ত্যাগের মহিমায় দুঃখকে বরণ করিয়া লইয়াছে। দুঃখের পরে সুখএকথা ইহারা বলে নাই। এই গানে সাধনা আছে, সিদ্ধি নাই। এখানে পথ অবারিত-অবাধ, কিন্তু শুধুই পথ-পথের পরপারে কিছু নাই। অাঁধা বঁধু বলিতেছে “রাজকুমারী ! প্ৰেম করিয়া কেহ সুখী হয় নাই-এপথে কেবলই দুঃখ ৷” উভয়ে যখন নদীর জলে প্ৰাণ বিসর্জন দিলেন, তখন জীবনান্তে দুঃখের অন্ত হইল ; কিন্তু সমুদ্রের সেই অনির্দিষ্ট পথে- তাহারা অকুলে জীবন হারাইলেন, চণ্ডীদাসের মত বলিতে পারিলেন না, এই পথের শেষে পান্থ বাঞ্ছিতকে পাইবেন—“আমার বাহির দুয়ারে কপাট লেগেছে, ভিতর দুয়ার খোলা ।” সেই ভিতরের খোলা দ্বারা দিয়া যে অলৌকিক আলোর রশ্মি দেখা যায়,-যেখানে ‘সতী কি অসতী, তোমাতে বিদিত, ভালমন্দ নাহি জানি,” তোমার চরণ পদ্মই আমার কাম্য- সেখানে পৌছিলেই আমার পরম শান্তি। অাঁধা বধুর সেই কাম্য স্থান নাই। ভালবাসাই এখানে সব, সে ভালবাসা সর্বস্ব-দেওয়া, তাহা দুৰ্দমনীয়, তাহার বেগ এত প্ৰবল যে রাজ্যধনকুলশীল তাহার কাছে নগণ্য। অবশ্য বৈষ্ণব কবির সুরও একই রূপ। কিন্তু বৈষ্ণব কবি প্ৰেমাস্পদকে সর্বস্ব নিবেদন করিয়া পূর্ণানন্দের পরিকল্পনা করিয়াছে, পালাগানের কবি ত্যাগ করিয়াছেসর্বস্ব ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু আনন্দলোকে পৌছায় নাই। কাজলরেখা, কাঞ্চনমালা, শ্যামরায়, আধা বন্ধু, মহিষাল বঁধু প্ৰভৃতি কতকগুলি পল্লীকবিতায় বৈষ্ণব কবিতার কতকগুলি গ্রাম পাওয়া যায়,