পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

N অগ্রভাগ রাঙ্গা হইয়া উঠিয়াছে। রাত্রি নিস্তব্ধ নিথর, কেবল মাঝে মাঝে রহিয়া রহিয়া বউ কথা কও’ ঘুরিতে ঘুরিতে আকাশে চীৎকার করিয়া বেড়াইতেছে, তাহার স্বরে কোন অনির্দিষ্ট মানিনীর মান ভাঙ্গিতেছে কে বলিবে ? সেই নিবিড় নিষ্কম্প আকাশে দাড়াইয়া প্ৰকৃতি যেন রূদ্ধশ্বাসে কোন যোগ সাধনা করিতেছে। বেদেদের নূতন বাড়ীঘর, সুস্নিগ্ধ পুকুরের তীরে বড় বড় ঘর,-বেদেরা তাহাতে বড় আরামে ঘুমাইতেছে, তাহাদের নাসিকার শব্দে গভীর সুষুপ্তি বুঝাইতেছে। দ্বিপ্রহর রাত্রে নদের চাদের ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল, শিয়রে স্বর্ণমণ্ডিত সঙ্কেত বাঁশীটি ছিল, তিনি তাহাতে ফু দিলেন। বঁাশীর বিলাপ দূরস্থিত আড়ার্কাদির বাগানে এক বিরহিনীর মৰ্ম্মে প্ৰবেশ করিয়া তাহার ঘুম ভাঙ্গিয়া দিল। অতি ব্যস্ত সমস্ত ভাবে মহুয়া উঠিয়া কলসী কঁাখে বেদেদের কুটিরের পাশ দিয়া উন্মত্তবেগে নদীর ঘাটে ছুটিয়া আসিল। আসিয়া দেখে, নদের চাদ তাহার পূর্বেই বিভোর হইয়া বঁাশী বাজাইতেছে। বিলম্বে অসহিষ্ণু হইয়া বাঁশী কঁাদিয়া ডাকিতেছে। আকাশের চাঁদ তাহাকে পৃথিবীর চাদকে দেখাইয়া দিল, তখন কি আনন্দ ! দুইজনে দুইজনের আলিঙ্গনবদ্ধ, এক চক্ষু আনন্দাশ্রুপূর্ণ, আর এক চক্ষু আশঙ্কাতুর। রাজপুত্ৰ বলিলেন, “এই ঐশ্বৰ্য্যের ছাই পাশ দিয়া আমি কি করিব, চল আমরা এখনই এই রাজ্য ছাড়িয়া যাই।” মহুয়া কাতর কণ্ঠে বলিল “না, তাহা হইবার নয়। আমি তোমাকে ছাড়িয়া থাকিতে পারিব না, এই রাজৈশ্বৰ্য্য হইতে টানিয়া বনে জঙ্গলে লইয়া যাইতে পারিব না, আমি তোমার মুখখানি দেখিতে দেখিতে এই নদীতে-এই কামনা-সায়রে ডুবিয়া মরিব, যাহাতে পরজন্মে তোমায় পাই। হায় ! যদি তুমি ফুল হইতে তবে তো তোমায় খোপায় বঁধিয়া এখনই পলাইয়া যাইয়া বনে লুকাইয়া থাকিতে পারিতাম ! “বঁধু, আমি তোমায় কি বলিব! এই বেদের মেয়েকে দিয়া তুমি কি করিবে ? এই আবর্জনা তুমি এই খানে ফেলিয়া রাখিয়া ঘরে যাও, সুন্দরী দেখিয়া কোন রাজকন্যাকে বিবাহ করিয়া সুখী হও । আমার সঙ্গে এক ঘাটে পা দিলে তুমি নিজের রাজ্য-সম্পদ সকলই নষ্ট করিবে।” যুবরাজ Vos