পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন-কথা Sl/o রবীন্দ্রনাথের সম্পাদকত্বের কালে দীনেশ বাবু বঙ্গদর্শনের গুরুতর সম্পাদকীয় কাৰ্য্যগুলি কবিবরের উপদেশ অনুসারে সম্পাদন করিতেন । শ্ৰীযুক্ত সরলা দেবী সম্পাদিত ভারতীরও অনেক কাজ তিনি এইভাবে নির্বাহ করিয়াছিলেন । দীনেশবাবুর স্নায়ুদৌর্বল্য অনেককাল ছিল ; এই সময় ফরিদপুরে থাকাকালীন সৰ্পভয় তাহাকে এরূপ পাইয়া বসিয়াছিল যে তাহা একটা উৎকট রোগে পরিণত হইয়াছিল। তিনি বলিয়াছেন, তিনি এই সময় মনসাদেবীর স্বপ্নাদেশ পাইয়া তদনুসারে জীবন নিয়ন্ত্রিত করেন এবং অচিরে রোগ হইতে মুক্তি লাভ করেন। মনের অতি নিভৃত কোণে র্তাহার যে কৃতজ্ঞতা ছিল তদ্বারা অনুপ্ৰাণিত হইয়া তিনি ক্ষুদ্র “বেহুল” পুস্তকখানি রচনা করেন—উহা কোনকালেই পাঠ্যতালিকার অন্তভুক্ত হয় নাই, অথচ এই ক্ষুদ্র বইখানির এত বেশী বিক্রয় হইয়াছিল যে, বোধ হয় দীনেশ বাবুর আর কোন পুস্তক বাজারে ইহার সমকক্ষতা করিতে পারে নাই। নিতান্ত দুঃখদায়ক রোগ শয্যায় বাল্মীকির রামায়ণ ও বৈষ্ণবদিগের পদাবলী তাহার নিত্য সহচর ছিল । বাল্মীকি-রামায়ণের কয়েকটি কাণ্ড তিনি একবারে মুখস্থ করিয়া ফেলিয়াছিলেন। রামায়ণের প্ৰতি ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও বহুবর্ষব্যাপী অনুরাগের ফলে তিনি “রামায়ণী কথা” নামক অপূর্ব গ্ৰন্থ রচনা করেন, এই বইখানি সুধী-সমাজে বিশেষ প্ৰতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে। বেহুলার ন্যায়-সতী, জড়ভরত, ফুল্লারা, ধরাদ্ৰোণ, কুশধ্বজ, মুক্তাচুরী, রাখালের রাজগী, রাগরঙ্গ, সুবল সখার কাণ্ড ও শ্যামলী খোজা প্ৰভৃতি কতকগুলি পুস্তক তিনি রচনা করেন । ইহারা যেরূপ আদরের সহিত সাহিত্যিক সমাজে গৃহীত হইয়াছিল-তাহা অভূতপূর্ব। এই জনপ্রিয়তার কারণ, দীনেশবাবু কখনই এই সমস্ত উপাখ্যান বাজে গল্প বা রূপকথার ভাবে লেখেন নাই। ইহাদের অলৌকিক বৰ্ণনার মধ্যেও সর্বত্র লেখকের অন্তরের দরদ ও ভক্তি প্ৰকাশ পাইয়াছে। দীনেশবাবু আজীবন কথকতা ও কীৰ্ত্তন শুনিয়া তাহার অন্তরের অন্তরতম দেশে যে গৃঢ় ভক্তিরস সঞ্চয় করিয়াছিলেন, এই বইগুলি তাঁহারই অভিব্যক্তি। “বেহুলা”। দীনেশ বাবুর পুত্র কিরণচন্দ্র এবং কাপ্তেন পিটাভেল