পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

al Se মহুয়া উঠিয়া বসিল । হোমরা বলিল, “এই ষোল বছর মায়ের মত তোমাকে পালন করিয়াছি, আজ আমার একটি কথা তোমাকে পালন করিতে হইবে। এই বিষ মাখানো ছুরিখানি লও, নদীর ঘাটে আমার সেই শত্রু শুইয়া আছে, তুমি তাহার বুকে এই ছুরি বিধাইয়া মৃত দেহটা টানিয়া নদীর জলে ফেলিয়া দিয়া আইস।” ঘুমের ঘোরে কি করিতে হইবে মহুয়া ভাল করিয়া বুঝিল না। ছুরি খানি হাতে লইয়া সে নদীর ঘাটের দিকে রওনা হইল। “পায়ে পড়ে মাথার চুল চোখে পড়ে পানি। উপায় চিন্তিয়া কন্যা হৈল উন্মাদিনী ॥” সেই নদীর ঘাটে পাতার বিছানা, হিজল গাছের নীচে দেব-মূৰ্ত্তির মত নদের চাদ ঘুমাইয়া আছেন, মেঘ সেইক্ষণে চাদকে ছাড়িয়া দিয়াছে, চন্দ্রের আলো মুখখানিতে পড়িয়াছে। স্বৰ্গ হইতে দেবতা কি ভুলে মাটীতে আসিয়া ঘুমাইতেছেন ? মহুয়া ডাকিতেছে, “উঠ-তুমি আমার মাথার ঠাকুর, তোমাকে মারিয়া জলে ফেলিয়া দিব ! তাও কি হয়, তার পূর্বে এই ছুরি নিজের বুকে বিন্ধাইয়া প্ৰাণ দিব।” কুমারীর স্পর্শে নদের ঠাকুর জাগিয়া দেখিল, মহুয়ার চাঁদ-পানা মুখখানি জলে ভাসিতেছে, সে আত্মহত্যার জন্য উদ্যত । ঘুমের আবেশে মহুয়ার এই মুখখানিই নদের চাঁদ দেখিতেছিল, সে মহুয়ার হাত হইতে ছুরিখানি কাড়িয়া লইল। মহুয়া বলিল, “তুমি রাজার ছেলে, বামুন,-কেন আমার জন্য তোমার এত কষ্ট ! হতভাগিনী তোমার পায়ের কাছে মরিয়া যাউক । তুমি বাড়ী ফিরিয়া যাও, তুমি সকলের চোখের দুলাল, একটি সুন্দরী মেয়ে বিবাহ করিয়া সুখে ঘর কর । আমি তোমার সুখের পথে কঁাটা হইয়াছি, এখানে মরিতে পারিলে সে যে আমার সুখের মরণ হইবে।” নদের চাঁদ-“আমার ঘরে ফিরিবার সাধ নাই, সাধ্য নাই, আমি জাত দিয়াছি; মা-বাবা-ভাই-বন্ধু আমার সকলই তুমি। তোমাকে ছাড়া আমি