পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

v ১ সেই সুর শুনিয়া মহুয়া থরহরি কঁাপিতে লাগিল এবং নদের চাঁদের ক্ৰোড়ে ঢলিয়া পড়িল। “তোমাকে কি কোন সৰ্পে দংশন করিয়াছে’, অতি ব্যস্তসমস্ত ভাবে রাজকুমার তাহার দেহ পরীক্ষা করিতে লাগিলেন। মহুয়া অতিকষ্টে আত্মসংবরণ করিয়া আস্তে আস্তে বলিল-“আমাকে সাপে কামড়ায় নাই। কিন্তু আমাদের সুখ-নিশি প্ৰভাত হইয়া আসিয়াছে, কুমার, কাল যদি বাচিয়া থাকি, তবে আমি তোমাকে আমার অতীত ইতিহাস শুনাইব। • কিন্তু আমাদের দিন শেষ হইয়া আসিয়াছে। ঐ যে বঁাশীর সুর শুনিতে পাইলে, উহা আমার সই পালঙ্কের সঙ্কেত-বঁাশীর সুর। বেদেরা বহু চেষ্টায় আমাদের সন্ধান জানিতে পারিয়াছে, দলবল লইয়া আমার ধৰ্ম্ম-পিতা হোমরা আসিতেছে। সইএর সাবধানতা-জ্ঞাপক সঙ্কেতে আমি কি করিব ? এখান হইতে পলাইবার আর উপায় নাই। আজ রাত্রি তোমার বুকে মাথা রাখিয়া শুইয়া থাকিব। আমার এমন আরামের স্থান স্বর্গেও মিলিবে না। কি করিব ? বিধাতা আমাকে স্বৰ্গসুখ হইতে বঞ্চিত করিলেন ।” নদের চাঁদের গায়ে হেলিয়া মহুয়া কুটিরে প্রবেশ করিল, সাদা ও রক্ত সুগন্ধি ফুল বাসর-শয্যার এক কোণে সাজি ভরিয়া মহুয়া রাখিয়া দিয়াছিল, আজ আর সেই সুখের বাসর সাজাইতে তাহার সামর্থ্যে কুলাইল না। সে প্ৰাণপতিকে নিবিড়ভাবে জড়াইয়া ধরিয়া মৃত্যুর অপেক্ষা করিয়া রহিল । রাত্ৰি প্ৰভাত হইলে তাহারা কুটির ছাড়িয়া বাহিরে পা দেওয়া মাত্র দেখিতে পাইল, বেদেদের কুকুর কুটিরখানি বেষ্টন করিয়া আছে, সম্মুখে হোমরা বেদে ও তাহার দলবল। হোমরার হাতে বিষাক্ত ছুরি, বিদ্যুতের মত চমকাইতেছে। হোমরা ছুরিখানি মহুয়ার হাতে দিয়া বলিল, “তুমি এই মুহুৰ্ত্তে আমার দুষমনের বুকে এই ছুরি বিধাইয়া দাও, এবং আমার সঙ্গে চলিয়া আইস । ছোটকাল হইতে আমি তোমাকে কত যত্বে পালন করিয়াছি এবং এই সুজন বেদেকে আমাদের সমস্ত খেলা ও কৌতুক শিখাইয়াছি। এই সুগঠিত-দেহ প্রিয়দর্শন মূৰ্ত্তি সুজন তোমার অনুরক্ত, ইহাকে আমি আমার কন্যা-জামাতারূপে গ্ৰহণ করিয়াছি। তুমি ইহাকে