পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ROS আলোচনা আমি যখন এম-এ ক্লাসের ছাত্ৰাদিগকে পড়াইতাম, তখন প্ৰতিবৎসর নবাগত ছাত্ৰাদিগকে এই একটি প্রশ্ন করিতাম,-“নদের চাদ ও মহুয়া-উভয়ে উভয়ের প্রতি অনুরক্ত ছিল,-ইহাদের মধ্যে তোমরা কাহাকে উচ্চস্থান দিতে চাও,-প্রেমের ত্যাগ হিসাবে কাহাকে বড় বলিবে ।” অধিকাংশ ছাত্রের এক উত্তর, নদের চাদ শ্ৰেষ্ঠ, বেদের মেয়ের ত্যাগ তো কিছুই নহে। এত রূপ, এত গুণ, এত ঐশ্বৰ্য্য, এত বড় বামুনের কুলসে সমস্তই তো বিসর্জন দিয়াছিল নদের চাদ-এই বেদের মেয়ের জন্য। মহুয়া আর তেমন কি করিয়াছে ; এত বড়, সৰ্ব্ব গুণে শ্রেষ্ঠ,-তরুণ বয়স্ক প্ৰণয়ীকে পাইয়া তো সে কৃত-কুতাৰ্থ হইয়া গিয়াছে, তাহার ত্যাগ তো তুলনায় কিছুই নহে। যখন হোমরা বামুন রাজার নগর হইতে তাহাকে লইয়া পার্বত্য প্রদেশে তাহার বাড়ীতে লইয়া গেল, তখন সে প্ৰতিবাদ না করিয়া বাপের সঙ্গে সঙ্গে চলিল। এদিকে রাজকুমার তাহার রাজ্যপাট ছাড়িয়া-বনে জঙ্গলে উপবাসী থাকিয়া গাছের তলায় শুইয়া থাকিত, তাহার চােখে ঘুম ছিল না, মাথার কুঞ্চিত চােচর কেশ জটাবদ্ধ হইয়া গিয়াছিল। যিনি স্বর্ণপালঙ্কে দুগ্ধফেননিভা শয্যায় শুইতেন, পাচকেরা রাত্ৰি দিন যাহার জন্য সুখাদ্য প্ৰস্তুত করিতে ব্যস্ত থাকিত, র্যাহার সেবার জন্য দাসদাসী চাকর নফরের অভাব ছিল না, একটু শিরঃপীড়া হইলে চিকিৎসকের মেলা বসিয়া যাইত, সেই রাজকুমার নদের চাঁদ বেদের মেয়ের জন্য যাহা সহিয়া ছিলেন, তাহার তুলনা নাই। ঘুরিয়া ফিরিয়া নদের চাঁদের মহিমা কীৰ্ত্তনই অনেক ছাত্র করিতেন । কিন্তু দুই একটি ছাত্ৰ মহুয়ার শ্রেষ্ঠত্ব প্ৰতিপাদনে চেষ্টিত ছিলেন। তাহারা বলিতেন-যাহার যাহা আছে সে তাহা ত্যাগ করিলে যথেষ্ট ত্যাগ হয়, ফকির কখনও রাজ্য ত্যাগ করিতে পারে না, সে যদি তাহার ভিক্ষার বুলিটি ত্যাগ করে, তবেই বুঝিতে হইবে, তাহার সর্বাপেক্ষা বড়