পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 বাংলার পুৱনারী ৯৯ জনের হয়, কতকদিন পরে যদি রাজকুমারের খেয়াল ছুটিয়া যায়, তবে তঁহার কি গতি হইবে ? তখন তিনি দেখিবেন, বেদের মেয়ের উপর র্তাহার আর অনুরাগ নাই, অথচ তঁহার জন্য তিনি সম্পূর্ণরূপে রিক্ত হইয়া সর্বস্ব বঞ্চিত হইয়া পথে আসিয়া দাড়াইয়াছেন ! তঁহার এই অবস্থা মহুয়া কল্পনা করিতেও শঙ্কিত হইয়াছিল। প্ৰকৃত ভালবাসার ধৰ্ম্ম এই যে, তাহা প্ৰণয়ীর ইষ্ট চিন্তাকে সর্বাপেক্ষা বড় করিয়া দেখে, এই প্রেরণায় মহুয়া নিজে সর্বস্ব বঞ্চিত হইয়াও রাজকুমারের যাহা ইষ্ট তাহা নিজের সাময়িক সুখের প্রবৃত্তি অপেক্ষা বড় করিয়া দেখিয়াছিলেন এবং এই জন্য র্তাহার বিরহে মৃত্যুকে নিঃশব্দে বরণ করিয়া লইবার জন্য স্বীয় বন্যকুটিরে হোমরার সহিত প্ৰত্যাবৰ্ত্তন করিয়াছিলেন। প্ৰণয়ীর এই ভবিষ্যত ইষ্ট কামনা র্তাহার প্রেমের একটি অঙ্গ, আমরা ইহার পরে আরও পরিষ্কার করিয়া দেখাইব । প্ৰতি বিপদের মুখে মহুয়া যে উদ্ভাবনী শক্তি দেখাইয়াছেন, তাহাও সচরাচর মেয়েদের মধ্যে দেখা যায় না, এজন্য কোন উপায়ই র্তাহার অগ্রাহ্যু হয় নাই। কৌশলে হননি, নৌকার ভরাডুবি করিয়া ধনপ্ৰাণে শত্রুর সর্বনাশ, এসমস্ত উপায় হিসাবে তাহার গ্ৰহণীয় হইয়াছিল। সদাগরকে তিনি ভালবাসার ভাণ দেখাইয়াছিলেন, সন্ন্যাসীকেও তিনি মিথ্যা ভরসা। দিয়াছিলেন, “আমার স্বামীকে বঁাচাইয়া দাও, আমি তোমার অভিলাষ পূর্ণ করিব।” মোট কথা তঁহার প্রাণের দেবতাকে লাভ করা ও তাঁহাকে রক্ষা করিবার জন্য যখন যে প্ৰয়োজন হইয়াছে, তাহা তিনি করিয়াছেন । তাহাতে মিথ্যা কথা, লোক হত্যা ও পরের সর্বস্ব লোপ-এসকল কোন কাৰ্য্য হইতে তিনি বিরত হন নাই। এই রমণীর মত সর্ব-বিপদে নিজের সামর্থ্যের উপর নির্ভর করিয়া রঙ্গমঞ্চে অগ্রসর হইতে কে কোন নারীকে দেখিয়াছে ? যখন সন্ন্যাসীর হাতে লাঞ্ছিত হইয়া স্বামীর প্রাণ-নাশের প্রচুর সম্ভাবনা তিনি দেখিলেন, তখন সম্পূর্ণরূপে অসহায় কঙ্কালসার উঠতে বসিতে অশক্ত নদের চাদকে পৃষ্ঠের উপর ফেলিয়া-শিকার লইয়া পলায়ণপর বাঘিনীর মত তিনি পর্বতের শৃঙ্গে আরোহণ করিয়া পৰ্যটন করিতে লাগিলেন।