পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SAD(t বহুনারীর এই অপূর্ব দৃশ্য আর কোথায় কে দেখিয়াছে ? প্ৰাচীন সাহিত্যে বাঙ্গালী রমণী অনেকটা সীতার ছাচে ঢালা ; তঁাহারা সহিতে, প্ৰাণত্যাগ করিতে, প্রেমের জন্য যথাসাধ্য আত্মসমৰ্পণ এমন কি প্ৰাণ ত্যাগ করিতে সর্বদা প্ৰস্তুত ! কিন্তু এই পাহাড়িয়া রমণীর বিপদের সময় অলৌকিক উদ্ভাবনী শক্তি ও আশ্চৰ্য্য মৌলিকতা কে কবে দেখাইয়াছে। মহুয়া চরিত্র জলে-ভাসা পদ্ম-ফুল নহে, বায়ুচালিত তৃণ নহে, প্রেমের স্রোতে নিমজমান একখানি স্বর্ণ-ডিঙ্গা নহে, এই চরিত্রের আগাগোড়া মৌলিক রহস্যাবৃত। বঙ্গ সাহিত্যে কেন, অন্য কোন সাহিত্যে ইহার জোড়া আছে বলিয়া আমরা জানি না। এজন্য অধ্যাপক ষ্টেল ক্রমরিক বলিয়াছেন, “ভারতীয় সাহিত্য আমি যতটা পড়িয়াছি। তন্মধ্যে মহুয়ার মত আর একটি চিত্র আমি দেখি नांछे ।” পূর্বেই বলিয়াছি, মহুয়ার মনে অনেক দিন পৰ্যন্ত সন্দেহ ছিল যে, নদের ঠাকুরের ভালবাসা গভীর হইলেও তাহার স্থায়ীত্বে বিশ্বাস নাই; এই গভীর স্নেহ কিছু দিন পরে শুকাইয়া যাইতে পারে,-উহা বড় মানুষের খেয়াল, খুব ধোঁয়ার সৃষ্টি করিয়া কতক দিনের মধ্যে উবিয়া যাইতে পারে। এই আশঙ্কায় তিনি প্ৰথম প্ৰথম ইহার বেশী প্রশ্ৰয় দেন নাই, কুমার পাছে এই মোহে পড়িয়া সর্বস্বান্ত হন—এবং শেষে গৃহে ফিরিবার পথ না ° । কিন্তু যে দিন মহুয়া সত্য সত্য বুবিল, নদের চাঁদের প্ৰেম ‘নিকষিত হেম, ইহা বড় মানুষের ছেলের একটা চলন্ত খেয়াল নহে, সেদিন সম্পূর্ণভাবে র্তাহার কাছে সে ধরা দিল। সেই চাদের জ্যোৎস্নায় অভ্ৰে বেষ্টিত আধআলো আধা-আঁধার রাত্রে নদীর ঘাটে হিজল গাছের মূলে সে শায়িত নদের চাঁদের পাশে বসিয়া বলিল, “তুমি মায়ের কত আদরের ছেলে, চোখের মণি! তোমার অতুল ঐশ্বৰ্য্য, ব্ৰাহ্মণ বংশের সম্মান, তুমি পাগল, এসকল কেন খোয়াইবে ? তুমি ঘরে ফিরিয়া যাও। সুন্দরী দেখিয়া কোন রমণীকে বিবাহ করা। বাদিয়ার এই বালিকাকে দেখিয়া কেন চির-হতভাগ্যের জীবন বরণ করিতে চাহিতেছ?”