পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিকতারা NGOooO নদীর বহু দূর ব্যাপিয়া দেখা দিল, নদ যে একটা গণ্ডী আঁকিয় তাহা স্বীয় গর্ভস্থ করিতেছে, বিশু তাহা খেয়াল করে নাই ; অকস্মাৎ সেই চাপ ভাঙ্গিয়া মহাশব্দে জলের মধ্যে পড়িয়া গেল। চারিদিকে উৰ্ম্মিরাশি থৈ থৈ করিয়া সেই স্থানে একটা কোলাহলের সৃষ্টি করিল, বাসুর মা ছুটিয়া আসিয়া দেখিল সেই উত্তাল ঢেউ রাশির মধ্যে একটা মাথা তাহার কুটিরের দিকে ক্ষণেকের জন্য দৃষ্টিপাত করিয়া অতলে ডুবিয়া গেল। স্বামীর এই শোচনীয় মৃত্যু দেখিয়া বাসুর মা মাটীতে পড়িয়া লুটপুট করিয়া कॅ८िऊ ब्रांत्रिोब्ल । “আমার আর এ জগতে কে আছে, চরণের দাসীকে একাকী ফেলিয়া কোথায় গেলে ?” এই বলিতে বলিতে বাসুর মা জীবন ত্যাগ করিতে প্ৰস্তুত হইল। একবার ভাবিল, গলায় শাড়ীর আঁচল বঁাধিয়া কোন গাছের ডালে আত্মহত্যা করে, আবার ভাবিল বাসুকে কেমনে মানুষ করিব, তাহাকে লইয়া এক ঘরে কেমন করিয়া থাকিব ? তখন বুকে ছুরি বিন্ধাইয়া প্ৰাণ ত্যাগ করিবার সঙ্কল্প করিল, কিন্তু শেষে স্থির করিল, যেখানে তাহার একাধিক পুত্র ডুবিয়া মরিয়াছে, স্বামী যেথায় চােখের সামনে গেলেন, ব্ৰহ্মপুত্রের সেই শীতল জলই তাহার শেষ আশ্রয়! তখন সে ছুটিয়া সেই নদের দিকে চলিল, কঁপাইয়া পড়িবার জন্য। এমন সময় পিছু হইতে বাসু ‘মা মা’ বলিয়া ডাকিল। ফিরিয়া চাহিয়া মাতা পুত্রের ‘সোনামুখ”খানি দেখিতে পাইল, তাহার মন বাৎসল্যে ভরিয়া গেল । “তুলি গেল পতির কথা আর মনের জালা। আমির কয় আর মরবা কেন চক্ষু মুইছা ফেলা ৷” আর মর্যা হৈল না। বাসুকে লইয়া তাহার মাতা স্বীয় জীর্ণকুটিরে প্ৰবেশ করিল ; প্ৰতিবেশীদের মধ্যে যাহারা দয়াদ্রে ছিল-তাহাদের সাহায্যে বাসু ও তাহার মাত কষ্টে সৃষ্টি দিন গুজরান করিতে লাগিল । বাসুর মা কিছুতেই স্বামীর কুড়ে ঘরখানি ছাড়িল না। বাসুকে বুকে করিয়া পাখী যেমন তাহার শাবকটিকে পাখার তলে রাখিয়া দিনরাত পাহারা দেয়, তেমনই ভাবে তাহাকে পালন করিতে লাগিল। :