পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

to বাংলার পুৱালারী বাসু তরুণ বয়সে সে পাড়ায় বাসুর মায়ের ইষ্ট কুটুম্ব কেহ ছিল না, তাহার মা বাপ অথবা আপনার বলিতে অন্য কেহ ছিল না ; পাড়া পড়সীর মধ্যে কয়েক ঘর জেলে ও এক ঘর কোচ ছিল। যে অনাথ, তাহারভার বিধাতা লয়েন, কুচনী পরিবারের কানুর মা-বাসুর মারি অন্তরঙ্গ হইল ; তাহারা উভয়ে সখিত্ব সূত্রে আবদ্ধ হইল-এই অনাত্মীয়ের আত্মীয়তায় বাসুর মা যেন হাতে স্বৰ্গ পাইল । কানুর বয়স বিশ, সবে তাহার গোঁফের রেখা দিয়াছে, বাসু তাহার তিন বছরের ছোট-সে। সর্বদা কানুর পিছনে পিছনে থাকে। কানুর প্রকৃতিটি বড়। উদাস, তাহার সঙ্গে বাসুর এইরূপ সর্বদা ঘোরা-ফেরা তাহার মাতা পছন্দ করিত না। অথচ এরূপ উপকারী বন্ধুর পুত্র, সে এ সম্বন্ধে মুখ ফুটিয়া কানুকে নিষেধ করিতেও পারিত না । কানুর মার মনটি দরদে ভরপুর। রোজই কিছু না কিছু সে বাসুদের বাড়ীতে লইয়া আসিত,-কোনও দিন গামছায় বঁাধিয়া কিছু চাল-ডাল, ও এক পেটী তৈল আনিয়া বাসুর মাকে উপহার দিত,-কোনও দিন বা কানুদের বাড়ীর পিছনে যে মহিষের বাথান ছিল,-সেইস্থান হইতে সে চুঙ্গ ভরিয়া বাসুর জন্য দুধ আনিয়া দিত, কোন কোন দিন নিজ বাগানের সদ্য-ভাঙ্গা বেগুন, কঁচা লঙ্কা ও বাড়ীর গাছের বেল-সইকে দিয়া হাসিমুখে তাহার সঙ্গে কথা কহিয়া দুই দণ্ড কাটাইয়া দিত। বাসুর- মা নিজেও কৰ্ম্মঠ, কোন দিন বসিয়া থাকে নাই, আজ এই বিপদের দিনে সে নিশ্চেষ্ট ছিল না, জেলেদের বাড়ীতে যাইয়া সে সূতা কাটিত, তাহদের ধান ভানিত-পারিশ্রমিক হিসাবে সে বাসুর জন্য কিছু মাছ ও ক্ষুদ কুঁড়া যাহা পাইত, তাহাই সন্তুষ্টচিত্তে বাড়ীতে লইয়া আসিত। সে ভাবিত, কবে বাসু বড় হইয়া জাত ব্যবসা আরম্ভ করিবে, এবং কবেই বা তাহার এই দুদিন ঘুচিবে ।