পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিকতারা \SNON) পাড়ে মাণিকতারা ও বাসুর প্রথম দর্শনে নিতান্ত প্ৰাকৃত কৃষকজনোচিত কথার মধ্যেও যেন বৈষ্ণব মহাজনাদিগের পূর্বরাগের পদ ঝংকৃত হইয়াছে। সাধুশীলের গৃহে রন্ধনের বর্ণনা, বউদের রান্না, শ্বশুর শ্বাশুড়ীর কথাবাৰ্ত্তা, পুরাতন ডাল চড়াইয়া দিয়া তাহা সিদ্ধ করিবার জন্য কড়াইএর উপর কঁাটা দিয়া ঘাঁটাঘাঁটি,-মেজ ছেলের ক্ষুধার জ্বালায় স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরিয়া প্ৰহারের চেষ্টা এবং গিন্নি আসিয়া তাহাকে হাত ধরিয়া নিরস্ত করা-ইত্যাদি দৃশ্য খুব রহস্যজনক ও উপাদেয় হইয়াছে! বাসুর শ্বশুরগৃহে প্ৰথম ভোজন ব্যাপারটাও অতিশয় হৃদয়গ্ৰাহী ভাষায় চিত্রিত হইয়াছে। বাসুর স্ত্রীর কাছে নিজের ডাকাতি-বৃত্তির কথা সংগোপন করার চেষ্টা, মাণিকতারার পাখী শিকার প্রভৃতি অপরূপ কবিত্বচ্ছটায় উজ্জ্বল হইয়া উঠিয়াছে। মোট কথা, এই পুস্তকখানি পাইয়া প্ৰথমে আমার মনে হইয়াছিল যে আমি একটি স্বর্ণখনির আবিষ্কার করিলাম, সেই মূল্যবান ধাতু নানা আবর্জনা ও ধূলি-বালু মিশ্ৰিত কিন্তু তাহাতে তাহার প্রকৃত মূল্য कभिशा यांश नांछे । গ্ৰন্থভাগে যে হাবিকেল পাখীর কথা আছে, এই পাখীটির নাম হইতেই কি প্ৰাচীন কালে বাঙ্গলার নাম হরিকেল হইয়াছিলি ? d এই গানে অমাজিত ভাষার আধিক্য দেখিয়া মনে হইতে পারে যে ইহা খুব প্ৰাচীন কিন্তু ইহা অষ্টাদশ শতাব্দীর অধিক প্ৰাচীন নহে। চাষাকবির ভাষা প্ৰাকৃত-জনোচিত হইলেও ইহার পয়ার ছন্দ অনেকটা নির্দোষ । প্ৰাচীন কবিতায় এই ছন্দই প্ৰধানতঃ সময়-নির্দেশক । দ্বিতীয়তঃ ডাকাতির যে সকল বর্ণনা আছে তাহা মোগল রাজ্যের অবসানে এবং বৃটিশদের অধিকার পুরোপুরী স্থাপনের পূর্ব সময়ের বলিয়া মনে হয়, সেই সময় এই দেশ অরাজকতাপূর্ণ ছিল এবং পল্লীতে পল্লীতে বিশেষতঃ নদীগর্ভে ডাকাতি ও নিৰ্ম্মম লুণ্ঠন কাৰ্য্য এই ভাবেই অনুষ্ঠিত হইত ; কিন্তু সেরপুর অঞ্চলে তখনও টাকার প্রচলন বেশী ছিল না। নতুবা কড়ির স্তপ দিয়া কেহই খেওয়া পার হইত না।