পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোনাই N98

  • সোনাই স্থির কণ্ঠে বলিল, “আমার নির্দোষ স্বামীকে আপনি বন্দীশালায় রাখিয়াছেন। তাহা যাহাই হউক, আমি যে এখানে আসিয়াছি, তাহা তঁহাকে জানিতে দিবেন না, তঁহাকে অবিলম্বে মুক্তি দিন এবং আপনার গৃহে আমার আগমন সংবাদ যাহাতে এদেশে কেহ না জানে

তাহার ব্যবস্থা করুন। মোট কথা, এ কথা একান্তভাবে গোপন থাকিবে, এই সর্ত পালন করিলে আমি আপনার নির্দেশ পালন করিব।” বন্দীশালায় মাধবের হস্ত পদ হইতে শৃঙ্খল খুলিয়া ফেলা হইল, তাহার বুকের উপরে একখানি পাথর চাপা দেওয়া হইয়াছিল-তাহা সরাইয়া ফেলা হইল। তারপর যে ভাওয়ালিয়ায় চড়িয়া সোনাই আসিয়াছিল, সেই ভাওয়ালিয়াতেই মাধব বাড়ীতে ফিরিবার অনুমতি পাইলেন । রাত্রি ঘোর অন্ধকার। তমসা যেন প্রেতিরূপ ধরিয়া চতুর্দিক হইতে হি হি করিয়া হাসিতেছে-কখন একবার বিদ্যুৎ দেখা যাইতেছে। বারবাঙ্গলার একখানি সুসজ্জিত প্ৰকোষ্ঠে দুগ্ধ-ফেন-নিভা শয্যায় নিরুপমা সুন্দরী শুইয়া আছে, গৃহের চারিদিকে প্রহরী, তাহারা ঘন ঘন গোপ মোচড়াইতেছে এবং ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুতের আলোকে তাহদের উন্মুক্ত কিরিচ জুলিয়া উঠিতেছে। সোনাই এই ঘোর নিশাকালে তাহার মাকে স্মরণ করিয়া হাহাকার করিয়া কঁাদিয়া উঠিল, মায়ের মুখখানি মনে পড়িতে তাহার বুকে শত দুঃখ জাগিয়া উঠিল, তাহার পর মাধবকে স্মরণ করিল, এত দুঃখেও যে সে তাহার জাগ্ৰত প্ৰত্যক্ষ দেবতা স্বামীকে মুক্তি দিতে পারিয়াছে, এই ভাবিয়া গৌরব বোধ করিল, তারপরে মা বনদুর্গার পায়ে সহস্ৰ প্ৰণতি জানাইল, “জীবনে মাকে হারাইয়াছি কিন্তু তুমি আমার সর্বকালের মা, সন্তানকে পায়ে স্থান দিও।” পিতা তাহার অল্পবয়সে মারা গিয়াছেন, তাহার কথা ভাল করিয়া মনে নাই। কতদিন তাহার মুখখানি মনে করিতে চেষ্টা পাইয়াছে কিন্তু পায় নাই। আজ এই ঘোর দুদিনে এই অপার সিন্ধু তুল্য দুঃখের অতল তলে মুমূর্ষু পিতার মুখখানি যেন স্পষ্ট দেখিতে পাইল। তাহার পিতার মৃত্যুর রাত্রে সমস্ত জগতের দুঃখ তাহদের ভাঙ্গা কুটিরখানি