পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার পুরনারী ܠܛ বঙ্গীয় পল্লীগীতিকা হইতে সঙ্কলিত। মূল গীতিকাগুলি পূর্ববঙ্গের পাড়া-গেয়ে ভাষায় লিখিত— তাহা সকলের সহজবোধ্য নহে। দীনেশ বাবুর সহজ ও সরল ভাষায় লিখিত এই উপাখ্যানগুলি সকলেই উপভোগ করিতে পরিবেন, আশা করা যায় । ব্যক্তিগত জীবনে দীনেশচন্দ্রের মত সদালাপী, নিরহঙ্কার, উদার, স্নেহশীল, ও সরল মানুষ খুব কমই দেখা যায়। এই আত্মভোলা মানুষটির কাছে সাহিত্যই ছিল ধৰ্ম্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ। জীবনের শেষ মুহুৰ্ত্ত পৰ্য্যন্ত সাহিত্য-বিষয়ক চিন্তায় তাহার চিত্ত আচ্ছন্ন ছিল। ১০ নভেম্বর কালীপূজার রাত্রে ‘বাংলার পুরনারী’ সংক্রান্ত প্ৰব্ৰুফ দেখা ও লেখা শেষ করিয়া তিনি অসুস্থ হইয়া পড়েন ; ২৭ শে নভেম্বর জগদ্ধাত্রী পূজার দিন সন্ধ্যা সাতটায় র্তাহার জীবনান্ত হয়। অসুস্থতার মধ্যেও তিনি প্ৰায়ই আমাদিগকে ডাকিয়া পাঠাইয়া এই গ্ৰন্থ সম্বন্ধে আলোচনা করিবার চেষ্টা করিতেন, জ্ঞান হারাইবার কিছুক্ষণ আগে তিনি আমাদের জানান যে বইখানি তিনি রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করিতে ইচ্ছা করেন। মৃত্যুর দুদিন আগে নিজের পরিবারবর্গের ভবিষ্যত-চিন্তায় তিনি বিচলিত হন এবং অতিকষ্টে উঠিয়া বসিয়া একখানি চেক সই করেন। এই অসুখের প্রারম্ভ হইতেই তিনি যেন বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে তাঁহার এ পৃথিবীর মেয়াদ শেষ হইয়াছে। দীনেশচন্দ্ৰ ফুল বড় ভালবাসিতেন। মৃত্যুর দিন বেলা দুইটার সময় তিনি বলেন, “আমার জন্যে সুবাস দেশী ফুল এনে দাও, সাদা ফুলের গন্ধ ভেসে আসুক আমার ঘরে। দরজা জানালা সব খুলে দাও, আলো আসুক, বাতাস আসুক।” মৃত্যুকে তিনি বরণ করিয়াছিলেন, একান্ত সজ্ঞানে, শান্ত সমাহিত উদ্বেগহীন নির্বিবকার চিত্তে ।