পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NOV8 বাংলার পুৱালারী আমি বাড়ী ফিরিবার পথে পিতাকে দেখিলাম, অন্য দিন আমার শ্রমক্কান্ত শরীর দেখিয়া তিনি কত আদরের সঙ্গে কথা বলেন, আজ আমাকে দেখিয়া অন্যদিকে মুখ ফিরাইলেন, একটি স্নেহের কথা বলিলেন না। আর তোমায় দেখিয়া কত আনন্দ পাই! কিন্তু তোমার মুখে কে যেন কালিমা ছড়াইয়া দিয়াছে ! ওকি ! কঁাদিতেছ। কেন ? অনেক দিন তো তোমার চোখে জল দেখি নাই! আমার কাছে সকল কথা খুলিয়া বল।” লীলা বলিল, “কঙ্ক তুমি এখনই এ গৃহ ত্যাগ কর—+যে দেশে আত্মীয় বান্ধব কি পরিচিত কেহ নাই, যে দেশ একবারে জনবিরল ও নির্বান্ধবতুমি সেইখানে যাও-আজই যাও—এখনই যাও।”-বলিতে বলিতে লীলা একটি সোণার পুতুলের ন্যায় ভাঙ্গিয়া পড়িল—তাহার মুখ দিয়া আর কোন কথা বাহির হইল না । শেষে বলিল-“আমি রাক্ষসী, বিষ-মাখা ভাত খাওয়াইয়া তোমাকে মারিতে বসিয়া আছি। ” কিছুকাল পরে লীলা নিজেকে কতকটা সম্বরণ করিয়া লইল এবং দুষ্ট লোকের কথায় গৰ্গ কিরূপ বিচলিত হইয়া ক্ষিপ্তের মত হইয়া গিয়াছেন, তাহা কঙ্ককে জানাইল । কঙ্ককে বধ করিবার জন্য যে গৰ্গ অন্ন ব্যঞ্জনে বিষ মিশাইয়াছেন, তাহা বলিতে যাইয়া লীলার বুক ভাঙ্গিয়া যাইতে লাগিল ; দুই হাতে অঞ্চল দিয়া চক্ষু মুছিয়া লীলা ফোপাইয়া কঁাদিতে লাগিল । কঙ্ক চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। কোন বৃক্ষের উপর বজ্ৰাঘাত হইলে প্ৰাণহীন তরু যেরূপ স্থির হইয়া মাটীর উপর ক্ষণকালের জন্য দাড়াইয়া থাকে, কঙ্ক সেইরূপ খানিকটা নিস্তব্ধ হইয়া রহিল ; তারপর দুঃখাৰ্ত্ত স্বরে বলিল, “লীলা ভগবান জানেন, আমার কোনও অপরাধ নাই। চন্দ্ৰ সূৰ্য্য সাক্ষ্য দিবেন, দিবারাত্রি সাক্ষ্য দিবেন। পিতা মহাজ্ঞানী ব্যক্তি, কুলোকের কথায় তাহার বুদ্ধি ক্ষণকালের জন্য মেঘাচ্ছন্ন হইয়াছে। কিন্তু এই মোহের ভাব বেশী সময় থাকিবে না ; আমি আপাততঃ কোন তীর্থস্থানে যাইতেছি ; পিতার এইভােব কাটিয়া গেলে আবার আমি আসিব । আর লীলা, পিতার প্রতি শ্ৰদ্ধাহীন হইও না, তিনি তোমার আমার পরম গুরুক্ষণতরে তঁহার বুদ্ধিভ্রংশ হইয়াছে।”