পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VOo বাংলার পুৱনারী হইবে।” এই বলিয়া গৰ্গ কিছু কাল মোহগ্ৰস্ত হইয়া ঠাকুর-ঘরে পড়িয়া রহিলেন । নিজে প্ৰাণ ত্যাগ করিয়া এই ঘোর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবেন। এই সঙ্কল্প তাহার মনে দৃঢ় হইল। কি ভাবে প্ৰাণ দিলে আমার মত নারকীর উদ্ধার হইতে পারে । এই ভাবিতে ভাবিতে গৰ্গ শালগ্রাম শিলার কাছে আবার হত্যা দিলেন । আরও দুই দিন কাটিয়া গেল। গৰ্গ ঠাকুর ঘরের খিল খুলিলেন না। শিষ্যেরা চিন্তিত হইয়া পড়িল। চতুর্থ দিন শেষ রাত্ৰে গৰ্গ আবার আদেশ শুনিলেন, সেই আদেশ কঠোর হইলেও অতি মধুর ; মায়ের কথার মত গঞ্জনাময় ও মায়ের কথার মত স্নেহ-মাখা । যাহা শুনিলেন, তাহাতে তাহার সর্বাঙ্গের তাপ জুড়াইয়া গেল। কে যেন তীব্ৰ ঔষধ দিয়া তাহার উৎকট ব্যাধি প্ৰশমিত করিয়া গেল। গৰ্গ শুনিলেন :- “তুমি যে ফুল মন্দির হইতে কঁাটি দিয়া ফেলিয়া দিয়াছ, তোমার কন্যার তোলা সেই ফুল ও দুর্বাদলে ঠাকুর পূজা কর-তোমার কৃত গোহিত্যার পাপের ইহাই প্ৰায়শ্চিত্ত ।” গৰ্গ যাহা শুদ্ধ মনে করিয়াছিলেন, নিজের হাতে তোলা সেই কলঙ্কিত ফুলগুলি মন্দির হইতে ফেলিয়া দিলেন ; মন্দিরের বাহির হইতে লীলার তোলা বাসি ও শুষ্ক ফুলগুলি মাথায় ঠেকাইয়া আবার পূজার আসনে বসিলেন । সারারাত্ৰি যোগাসনে বসিয়া গৰ্গ দেবতার কাছে মার্জনা চাহিলেন, তাহার চক্ষু দুটি কঁাদিয়া কঁাদিয়া ফুলিয়া গিয়াছে। পঞ্চম দিন প্ৰাতে গৰ্গ মন্দিরের দরজা খুলিলেন। র্তার অশ্রুশ্লিাবিত মুখে স্বৰ্গীয় জ্যোতি। বিচিত্র এবং মাধব নামে দুই শিস্য দ্বারে দণ্ডায়মান ছিল- গুরুদেব বলিলেন, “দুষ্ট লোকের ষড়যন্ত্রে পড়িয়া আমার প্রাণের কঙ্ককে আমি বিষ খাওয়াইতে গিয়াছিলাম। চির দিন যাহাকে পুত্ৰ বলিয়া স্নেহ করিয়াছি সে আমার ঘোর পাপে বিবাগী হইয়া চলিয়া গিয়াছে, যাহাকে আমি তোতা পাখীর মত মুখে মুখে আবৃত্তি করিয়া শ্লোক শিখাইয়াছিলাম, আমার সে তোতা পাখী কোথায় গেল ? তাহার চরিত্রগুণে তোমরা তাহাকে প্ৰাণের মত ভালবাসিয়াছ, সে শুধু তোমাদের বন্ধু ছিল