পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

y bro বাংলার পুরুজারী এভাবে কোন ব্ৰাহ্মণ-কবি হীন জাতিয়া রমণীকে শ্রদ্ধা দেখাইতে পারিতেন না। সংসারের নানা বিরুদ্ধ অবস্থায় নিপতিত হইয়া তিনি যে উদারতা ও ভ্ৰাতৃভাব শিখিয়াছিলেন, তাহাতে র্তাহার চরিত্র। সাধারণ মানব-সমাজের বহু উৰ্দ্ধে উঠিয়াছিল। র্তাহার জীবন-আখ্যায়িকা, রঘুসুত, দামোদর, নয়ানচাদ ঘোষ ও শ্ৰীনাথ বানিয়া এই চারিজন কবি লিখিয়াছেন। র্তাহারা সত্যের ক্ষুরধার সীমার মধ্যে র্তাহার কাহিনী যথাসম্ভব সতর্কতার সহিত আবদ্ধ রাখিয়াছিলেন, কেবল লীলার বিরহ ও প্ৰেম-কথার মধ্যে র্তাহারা কিছু কাব্যলীলা দেখাইয়াছেন, কিন্তু সাংসারিক জীবনের সমস্ত খুটিনাটিই তাহারা বাস্তব জীবন হইতে সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন। র্তাহারা হৃদয় দিয়া, মনের দরদ দিয়া কবির জীবন-কাহিনী এমনই সহানুভূতির সঙ্গে লিখিয়াছেন যে মনে হয়—তাহাদের নিৰ্ম্মল ও আন্তরিকতাপূর্ণ হৃদয়ে কঙ্কের জীবন যথাযথ ভাবেই প্ৰতিবিম্বিত হইয়াছিল। গর্গের চরিত্র অতি বিশাল-পাণ্ডিত্যে, আদর্শের উচ্চতায়, জপ তপের প্রভায় ও সহানুভূতিতে তাহা মৈনাক বা গৌরীশৃঙ্গের ন্যায় আমাদের চক্ষে নভস্পৰ্শী হইয়া দাঁড়ায়। কিন্তু তরুণ বয়সে কঙ্ক যে বুদ্ধিমত্তা, ধৈৰ্য্য ও সংযমের পরিচয় দিয়াছেন, তাহা অপূর্ব। যে ধৰ্ম্মপিতা তঁহাকে বিনাদোষে বিষ মিশ্রিত অন্ন খাওয়াইয়া মারিয়া ফেলিবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাহার উপর তার কি উদার ক্ষমাশীলতা ! কঙ্ক গর্গের চরিত্রের পরিচয় যেমন পাইয়াছিলেন, লীলাও তাহা পায় নাই। কঙ্ক বলিয়াছিলেন-“পিতা অতি মহান ব্যক্তি, তিনি শক্ৰদের ষড়যন্ত্রে পড়িয়া মুহুর্তের জন্য জ্ঞান হারাইয়াছেন, কিন্তু তিনি অতি ধৰ্ম্মপ্ৰাণ এবং বুদ্ধিমান—তাহার এই মোহাচ্ছন্ন ভাব কিছুতেই বেশীকাল স্থায়ী হইতে পারে না, তুমি ইহার প্রতি শ্ৰদ্ধা হারাইও না, তিনি তোমার ও আমার উভয়ের পূজ্য, যদি মুহুর্তের উত্তেজনায় উদভ্ৰান্ত হইয়া তিনি কোনরূপ অত্যাচার করেন, তবে সহিষ্ণু হইয়া তাহা সহ্যু করিয়া লইও ।” তরুণ বয়সে কঙ্ক পরিণত বুদ্ধি ও সংযম দেখাইতে পারিয়াছিলেন। এই জন্য বলিতেছি, তিনি গর্গের মত প্ৰবীন বয়স্ক না হইয়াও ভঁাহার ধৰ্ম্ম-পিতার অপেক্ষাও পরিণত বিচার শক্তি লাভ করিয়াছিলেন ।