পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जूमिका SMo সুতরাং আমরা পুর্বে যাহা বলিয়াছি সে কথা প্ৰমাণ হইতেছে যে অবাস্তব গল্পগুলি বাঙ্গালী-কবিদের হস্তে পড়িয়া এই দেশের অনুরাগনিষ্ঠা ও আদর্শ জীবনের প্রেরণা পাইয়া দেব-দেবীর মুক্তিতে পরিণত হইয়াছে। এই গীতিগুলির অপ্ৰাকৃত অংশ শুধু শিশুদের মনোরঞ্জনের উপযোগী হয় নাই, তাহা আপামর সাধারণের উপভোগ্য হিতগর্ভ আখ্যায়িকা হইয়া দাড়াইয়াছে। বনের ফলমূল দিয়া কবিরা দেবভোগ ও দেবনৈবেদ্য সৃষ্টি করিয়াছেন। রাণী কমলার গল্পে কিছু অংশ অপ্ৰাকৃতের সঙ্গে বর্ণিত হইয়াছে। কিন্তু ঘটনার ভিত্তি দৃঢ় সত্যকার ইতিহাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। কবি বাস্তব কাহিনীটির চতুর্দিকে একটা কবি-কল্পনার সৌন্দৰ্য্য-কুহকের পরিবেষ্টনী দিয়াছেন, যাহাতে বাস্তব স্বৰ্গীয় জ্যোতি লাভ করিয়া সুন্দর হইয়াছে। আঁধা বঁধুর গল্পে অলৌকিক কিছুই নাই-তথাপি বাস্তব জগতে এমন অন্ধ ও এমন প্ৰণয়িনীর পরিকল্পনার দৃষ্টান্ত সুদুলভ, মনে হয় এই কাব্য-কথা যেন বাংলার বাশীর একটা সুর। রাজকন্যা পতিকে ছাড়িয়া বাহিরের ডাকে বাহিরে পিছনে যাইতেছেন, অন্ধের মনে যে অনুরাগ জন্মিয়াছে তাহার শক্তি এত বড় যে তিনি প্ৰাণাপেক্ষ প্ৰিয় বঁাশী নদীর জলে ভাসাইয়া দিতেছেন, কবি অঘটন। কত ঘটনাই ঘটাইতেছেন, রাজা বাঁশী শুনিয়া অৰ্দ্ধেক রাজত্ব ভিখারীকে দিয়া ফেলিতেছেন, সতীকন্যা স্বামীকে ছাড়িয়া অসতীর মত পরপুরুষের পিছনে পিছনে যাইতেছেন,-কিন্তু এই সমস্ত অলৌকিক লীলার কোনও স্থানে এক বিন্দুও মনে আঘাত করে না, সকল দৃশ্যই সুখদ, সুন্দর, স্বপ্নজাল-জড়িত । পড়িতে পড়িতে নৈতিক র্তাহার নীতি কথা ভুলিয়া যান, পণ্ডিত র্তাহার শাস্ত্ৰ ভুলিয়া একাগ্ৰ হইয়া শোনেন । বাশীর সুর এমনই মিষ্ট যে পণ্ডিত, নীতিবিৎ, ইতিহাসজ্ঞ ও শাস্ত্রকার সকলে বোকা বনিয়া স্তব্ধ হইয়া এই সুরের মোহে ধরা দেন। রাজকন্যা স্বীয় পতিকে ছাড়িয়া গেলেন কোন শাস্ত্রের নজিরো ? এই প্রশ্ন কেহ তুলিতে সাহস 2 । ।