পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&layo বাংলার পুরনারী অন্যান্য গল্পের সকলগুলিই বাস্তব। দুঃখের বিষয় নিতান্ত অশিক্ষিতের হস্তে মাণিকতার চরিত্রটি যেভাবে ফুটিতে আরম্ভ করিয়াছিল, তাহার সমাধান পাইলাম না। এই রমণী চরিত্রে বাঙ্গালী-নারী শুধু সাধবী নহেন-শক্তিস্বরূপিনী, তিনি শুধু স্বামীর কণ্ঠালগ্ন হইতে বা তাহার চিতা-সঙ্গিনী হইতে শিখেন নাই, অলৌকিক বীৰ্য্যবত্ত্বা ও উদ্ভাবনী শক্তিতে তিনি আমাদিগকে বিস্মিত করিয়া দিয়াছেন । এই গল্পটির মাত্র তিনভাগের একভাগ পাইয়াছি, বঙ্গের পল্লীরসজ্ঞ এমন কেহ কি নাই, ইহার অবশিষ্ট অংশ উদ্ধার করিতে পারেন ?-আমি যে এখন পক্ষশূন্য জটায়ু, না আছে দৈহিক শক্তি, না আছে জীবনী-শক্তি । অন্যান্য আখ্যায়িকা সম্বন্ধে আমি এই পুস্তকের প্রতি গল্পের উপসংহার ভাগে আমার বক্তব্য বলিয়াছি । বাংলা দেশ এবং বাঙ্গালী জাতি কি উপাদানে গড়া এই গল্পগুলিতে তাহার অভাস পাইবেন । বাঙ্গালী যে সমুদ্রে ও বড় বড় নদ নদীতে ডিঙ্গা পরিচালনা করিতে দক্ষ ছিল—তাহার প্রমাণ এই গল্পগুলিতে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যাইবে। শুধু এই গল্পগুলিতে কেন, প্ৰাচীন বঙ্গসাহিত্যের আলিগলিতে সে প্ৰমাণ অজস্ৰ ! বাংলার ছোট ছোট মেয়েরা যে সকল ব্রত ও পূজা করিত-তাহার একমাত্র লক্ষ্য ছিল—তাহাদের সমুদ্র-প্রবাসী স্বগনগণের বিদেশে নিরাপদ-যাত্রার জন্য প্রার্থনা। ভাদুলি প্ৰভৃতি ব্ৰতের কথা পড়িলে পাঠক বুঝিতে পারিবেন, ছোট ছোট মেয়েরা তাহাদের কচি কচি হাত জোড় করিয়া দেবতা দিগকে সকাতরে প্রার্থনা জানায় যেন ঝড়-বৃষ্টি থামাইয়া হিংস্ৰ পশুদের আক্রমণ হইতে রক্ষা করিয়া র্তাহারা পিতা ভ্ৰাতা ও স্বামীদের বাড়ীতে ফিরাইয়া দেন । নদ নদী, বন বাদাড়, বাঘ ভালুক, হাওয়া ঢেউ, ইহারাই এই ক্ষুদ্র শিশুদের দেবতা, তাহদেরই ছবি আলপনায় আঁকিয়া তাহারা শত শত বার প্ৰণাম করিয়া জড় ও জীব জগতের সব কিছুর প্রাণ প্ৰতিষ্ঠা করিতেছে, ইহারাই তাদের চোখে সত্যিকার দেবতা, ইহারা যদি কৃপা করিয়া সেই প্ৰাণপ্ৰিয় স্বগণগণের কোন অনিষ্ট না করেন, তবেই তাহারা