পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कूबिक Sle/o র্তাহাদের ফিরিয়া পাইয়া তাদের ঘর বাড়ী আনন্দ কলরবে মুখরিত করিতে পারে। দিন রাত্রি তাহারা বাঘ, ভালুক, জল-প্লাবন ঝড় ও উত্তাল তরঙ্গের কথা ভাবিতেছে এবং তাহারাই তাহদের ইষ্ট দেবতা হইয়া ব্ৰত উপলক্ষে প্ৰত্যক্ষ দেখা দিতেছে, ইহাদেরই রূপ তাহারা পিঠালী দিয়া আলপনায় আঁকিতেছে, ইহাদেরই নাম করিয়া তাহারা গাঙ্গে সুান করিয়া প্রার্থনা করিতেছে, কলার কাণ্ডের ডিঙ্গিকে সাজাইয়া জলে ভাসাইয়া আত্মীয়গণের শুভকামনা করিতেছে। বংশীদাসের মনসা দেবীর ভাসানে, বিজয় গুপ্তের মনসা মঙ্গলে, চণ্ডীমঙ্গলগুলির ছত্রে এই সমুদ্র যাত্রার কথা আছে, কিন্তু বিশেষ করিয়া বিস্তারিত ভাবে পল্লী-যাত্রীদের সমুদ্র ও বিশাল নদ নদীতে যাত্রার কথা এই গল্পগুলিতে পাওয়া যায়। এই গল্পগুলিতে বাংলা-মাটির একটা চিত্তাকর্ষক ভ্ৰাণ আছে।--তাহাই পাঠককে বিশেষরূপে আকৃষ্ট করিবে,-ভাদ্র মাসে কেয়া, কুন্দ এবং কেলিকদম্ব, বসন্তকালে মালতী, জবা, নব-মল্লিকা, শরৎকালে কুমুদ, পদ্ম ও জল-কঙ্কলার প্রভৃতি চিরপরিচিত ফুলের গন্ধে চিনাইয়া দেয় যে কবিগণ বাংলারই কথা বলিতেছেন। বর্ষার বর্ণনা যে কত প্রিয় ও প্ৰেমিকের হৃদয়ে কিরূপ আবেগ আনয়ন করে তাহা পুনঃ পুনঃ কঙ্ক ও লীলার গল্পে চিত্ৰিত দেখা যায় । এই গল্পগুলির সর্বত্ৰ বিল খাল, গাঙচিল, কেয়াবন ও নিপ-বৃক্ষএসমস্তই পূর্ববঙ্গের বর্ষাকালীন চিত্ৰপট মনে জাগাইতেছে,-চাকলাদারের কন্যা কমলার বাল্যকালের স্মৃতিতে বঙ্গদেশ কি মধুর ভাবে জড়িত হইয়া আছে—তাহা পড়িয়া পড়িয়া মনে ক্লান্তি আসে না, প্ৰত্যেকবারেই নূতন বোধ হয়। বাল্যকালে এই দিনে মাতা তালের পিঠা তৈরী করিতেন, ভাদ্র মাসে এই দিনে মনসা দেবীর পুজায় কত লোক নব বস্ত্র পরিয়া তাহাদের পূজা মণ্ডপে আসিত, এখন সেই মন্দির দেবতাশূন্য, সন্ধ্যায় কেহ সেখানে আর আরতির বাতি জ্বালে না, বাদ্যভাণ্ড থামিয়া গিয়াছে। বর্ষাশেষে কৃষকেরা সোনার ফসল কাটিয়া আনিত, রমণীরা শাক বাজাইয়া, প্ৰদীপ৷ জ্বালাইয়া নবান্নের গান গাহিয়া “জোকার’ দিয়া স্বামী, ভাইদিগকে আগাইয়া ঘরে লইয়া যাইত এবং আঙ্গিনায় ফসল ফেলিয়া মঙ্গলোৎসব করিত।