পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sје বাংলার পুৱালারী কৃষি-প্ৰধান বঙ্গদেশ-এই গানগুলির সর্বত্র আমাদের নয়নপথে দেখা দিতেছে। বস্তুতঃ এই গল্পগুলির যে দিক দিয়া যাও, যে পথে হাঁট-সব স্থানেই বাংলার পুণ্য তীর্থের মাটী। বহুকাল হইল। আমরা পল্লীর মাটি হারাইয়াছি, আমরা পাথরের বন্দীশালায় আবদ্ধ, শুক পাখীর মত পিঞ্জরের সোনার শলাকাগুলির মূল্য নিরুপণ করিতেছি, কিন্তু কোথায় গেল সেই যুথি জাতি কুন্দ করবী রক্তাশোকের খেলা, কোথায় গেল সেই সন্ধ্যামালতী, নব-মল্লিকা ও চাপা কদম্বের সম্ভার, সেই ধারাহত পহুললের ভ্ৰাণ, কদম্বের শোভা এবং দিগন্তশিহরণজাগ্ৰতকারি কোকিলের সেই সুমিষ্ট কাকলী ও ভ্ৰমর গুজরণ-এই কথা-সাহিত্যের মুকুরে, পুরাতন বঙ্গপল্পী, অধুনাবিলুপ্ত সমাজ ও বঙ্গের চির-নবীন শ্যামল শ্ৰী আবার দেখা দিয়াছে। এই দৃশ্যগুলি এজন্য আমাদের এত প্রিয় ও এত স্নেহ মাখানো। গল্পগুলির যে আদর্শ-তাহাও বাঙ্গালী-প্ৰতিভার বৈশিষ্ট্য-জ্ঞাপকএমন গিরিকান্তার নদনদীপ্লাবী প্রেমের বন্যা অন্য কোন দেশে কোন কালে আসিয়াছে কিনা জানিনা। বাঙ্গালীর যাহা কাম্য-তাহার জন্য সে না করিতে পারে এমন কিছু নাই। তাহার দেহ মন মাটির পুতুলের মত উৎসর্গ করিয়া সে কাম্য বস্তুর সন্ধানে অতলে বাপাইয়া পড়ে। এই উদাম গতি-মনের এই প্ৰাণান্ত চেষ্টা বাংলা দেশের মাটির। বাঙ্গালী অলঙ্কার-শাস্ত্ৰ হাতে লইয়া তাহার ছাচে ভালবাসার আদর্শ গড়ে নাই। তাহার প্ৰেম কোন শাস্ত্রের ধার ধারে না, প্ৰণয়িনী তাহার স্বামীকে মুখের উপর তাহার প্রণয়ীকে উদ্দেশ করিয়া বলিতে পারে-“তিন সত্য কর তুমি আমাকে ঐ লোককে দিয়া দেবে।” যে দেশের রমণী কুঁড়িফুলের মত, মনের কথা মুখে আনিতে যাহার বাধ বাধ ঠেকে, সেই লাজশীলার এ কি স্বাধীন দুৰ্ব্বার অভিলাষ ! যে পথে বাঙ্গালী চলিবে সে পথের শেষ নাই। পথের বিপদ দেখাইয়া তুমি তাহাকে থামাইতে পারিবে না। সে পর্বত, সমুদ্র ও শত বাধাবিদ্রের ভয় রাখে না। সে নিৰ্ভীক পথিক-তাহার পথের গণ্ডী নাই, সে গণ্ডী স্বীকার করে না, গণ্ডীর ধৰ্ম্ম মানে না, সে পুথির বুলি বলে না, সে শিখানে কথা আবৃত্তি করে না । সেরূপ বাঙ্গালী, যাহারা