পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ro বাংলার পুরনারী প্ৰাণোন্মাদকারী ব্যঞ্জনা, কিন্তু তাহারা বৈষ্ণব পদাবলীর মত হইলেও বৈষ্ণব কবিতা-সম্ভব কবিতা নহে। আঁধা বঁধুর নায়িকার “বেণী-ভাঙ্গা কেশ তার চরণে লুটায়।” রাধিকার রূপ বর্ণনার মত শুনায়। “তোমায় বুকে লইয়া আমি শুনব তোমার বঁাশী। মরণে জীবনে বঁধু হইলাম দাসী৷” “মুখেতে রাখিয়া মুখ মনের কথা কও”, “বুকেতে অ্যাকিয়া রাখি তোমার মুখের হাসি”, “মন যমুনা উজান বহে, ঐ না। বাশীর গানে” ( আঁধা বন্ধু) প্ৰভৃতি বহু সংখ্যক পদ। এই লক্ষণাক্রোন্ত, বাহুল্য ভয়ে আর উদ্ধৃত করিলাম না । বাংলা দেশ যে এককালে জগতের অন্যতম সমৃদ্ধ প্ৰদেশ ছিল, তাহার প্ৰমাণ এই গল্পগুলির অনেক স্থানেই পাওয়া যায় । সোনার কলস, সোনার পালঙ্ক, সোনার ঝারির ত কথাই নাই ; ধনীর গৃহে পরিবেশনের সময় সোনার থালা এবং সোনার বাটীর ছড়াছড়ি হইত। ধন্যবান গৃহস্থের ঘরের মেয়েরা বহুসংখ্যক সহচরীর সঙ্গে নদীর ঘাটে সুন্নান করিতে যাইতেন, তাহাদের কাহারও মাথায় স্বর্ণ কুম্ভ, কাহারও মাথায় সোনার থালায় নীলাম্বরী, অগ্নিপাটের সাড়ী বা মেঘডুম্বর বস্ত্ৰ, কাহারও হাতে নানারূপ গন্ধ তৈল ও প্ৰসাধুনের দ্রব্য । চাকলাদারের কন্যা কমলার মানের বর্ণনা, ও রাণী কমলার সোমেশ্বরী নদীতে শেষ স্নানের বর্ণনা পাঠ করুন। চাকলাদারের মেয়ে তখন নূতন বয়সী, সহচরীরা গান গাহিতে গাহিতে ও নৃত্য করিতে করিতে চলিয়াছে। তাঁহাদের উল্লাসের কলকাকলী নদীর তীর মুখরিত করিতেছে। পাঁচ শত টাকার হাতীর র্দাতের শীতল পাটীর উল্লেখ অনেক গীতিকায়ই পাওয়া যায় ; চাকলাদারের কন্যা রাজসভায় তঁহার বাল্যকালের যে বর্ণনা দিয়াছেন, তাহাতে এদেশের পল্লী-চিত্র একটি সোনা-বাধা ফ্রেমের ছবির মত ঝলমল করিয়া উঠিতেছে, বার মাস তের পার্বণে পল্লীগুলি যেন সারা বৎসর নৃত্য করিতে থাকিত। সোনার বাটায় কেয়া খয়ের, চুয়া ও এলাচি দেওয়া পানের খিলি লইয়া তরুণীরা বাসর-গৃহে প্ৰবেশ করিতেন। গ্রীষ্মকালে নানারূপ আসবাবে সজ্জিত জলটুঙ্গী ঘর, দীঘির জলে অবস্থিত থাকিত। দম্পতি নানা রহস্য ও মধুর আলাপে। রজনী কাটাইয়া দিতেন, দীঘির জলের প্রস্ফুট পদ্মের সুরভি লইয়া বসন্তানিল মাঝে মাঝে সেই গৃহে ঢুকিয় তাহা সুবাসিত করিয়া দিত। গজমতির মালা, হীরার হার, সোনার দাত খোচানী কাঠি