পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা Su/o প্ৰভৃতি অলঙ্কারপত্র ও বিলাসের সামগ্ৰী যে কত ছিল তাহার ইয়ত্তা নাই, “লক্ষের শাড়ী” ত কথায় কথায় পাওয়া যায়। স্নানের সময় মেয়েরা গলার হীরার হার এবং সোনা ও জহরতের অলঙ্কার খুলিয়া রাখিতেন, পাছে তৈলসিক্ত দেহের স্পর্শে তাহারা মলিন হয়। সাধারণরূপ ধনী গৃহস্থের বাড়ীতে লড়াই করার জন্য আটটা, দশটা ষাড় থাকিত “লড়াই করিতে আছে আট গোটা ষাঁড়া” ( মলুয়া ) এবং প্ৰত্যেক গৃহস্থের ঘাটেই “বাইচ” খেলিরার জন্য দীর্ঘ সুদৰ্শন ডিঙ্গি বাধা থাকিত। এই সকল গীতিকায় ভৌগোলিক বিবরণ যথেষ্ট পাওয়া যায়। রূপবতী গল্পে রাজা বাড়ী হইতে রওনা হইয়া ফুলেশ্বরী পাড়ি দিয়া নরসুন্দার মুখে পড়িলেন, এবং সেই নদী উত্তীর্ণ হইয়া ঘোড়া-উৎরা ও পরে মেঘনায় আসিয়া পড়িলেন, এইভাবে কত নদ-নদী ও তীর্থস্থানের উল্লেখ পল্লীগীতিকায় পাওয়া যায়। মোট কথা, তখনকার দিনে লোক দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া জাপান বা কামস্কটুকা দেখিত না, তাহারা স্বপ্নবিলাসী ছিল না। তাহদের পল্লী ও গৃহ তাহদের বড় আদরের সামগ্রী ছিল । এখন আমরা দূরদেশ সম্বন্ধে প্ৰাজ্ঞ হইয়াছি, কিন্তু নিজগ্রামের নদীটির নাম পৰ্য্যন্ত জানি না। এই পল্লীগাথাগুলিতে যে দেশ দেখিতে পাই, তাহাই খাটি বঙ্গদেশ । এখন সে দেশ কোথায়-তাহার আনন্দময় শ্যামল রূপ কোথায় গেল, তাহার উৎসবগুলির কি হইল, প্ৰতিমা, মঠ, মসজিদ, মন্দির নিৰ্ম্মাণোপলক্ষে সে চারুশিল্পকলার চৰ্চা কোথায় গেল ? এদেশে কি আর বসন্ত ঋতু আসে না, এদেশের কোকিল ও বউ-কথা-কও কি আর ডালে বসিয়া ডাকে না, কোথায় গেল সেই সকল সন্ধ্যামালতী ও কেয়া বনের সৌরভ ? বৰ্ষা আসে-কিন্তু প্লাবন লইয়া বন্যা লইয়া তাহা কুটির ভাসাইয়া লইয়া যায়-সে। বর্ষার কদম্ববৰ্ণ ও চাপার ঘটা ফুরাইয়া গিয়াছে। এই পল্লীগীতিকার কয়েকখানি প্ৰাচীন চিত্ৰপট আছে, তাহারও অনেকগুলি লুপ্ত হইয়াছে। কে তাহদের উদ্ধার করিবে ? আমরা মোটরে করিয়া বিদেশীদের পাছে পাছে ঘুরিতেছি-এই পুচ্ছগ্রাহিতার দিন কবে অবসান হইবে ? — რYწYჯorა»(სოq 4^7-7