পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাণী কমলা ܐ( জল না উঠা পৰ্য্যন্ত তাহারা কোদাল ত্যাগ করিতে পারিবে না, তাহারা একদিনের ছুটি পাইবে না। ভয়ে-ঘোর অমাবস্যার অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়া তাহদের অনেকে উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া পলাইল, এদিকে পাছে রাজার পেয়াদা আসিয়া তাহাদিগকে ধরে—এই ভয়ে তাহারা ছুটিয়া পলায় ও পিছন দিকে মুখ ফিরাইয়া পুনঃ পুনঃ সতর্ক দৃষ্টিপাত করে। রাজা একদিন দেখিলেন, মজুরের দলের অংশ আছে কিনা সন্দেহ । যাহারা আছে, তাহারা কঁাদিয়া কাটিয়া যোড়হস্তে রাজার নিকট ছুটি চাহিল। তাহাদের দুর্দশা দেখিয়া রাজা ব্যথিত হইলেন। সেই রাত্রে রাজা বিমৰ্ষচিত্তে চিন্তা করিতে লাগিলেন ; এ চিন্তার পার নাই, শেষ নাই। মৃত্তিকার তল হইতে তাপ নিঃসৃত হইতেছে। পাহাড়িয়া জায়গা,—ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতি কোন প্ৰাকৃতিক বিপৰ্য্যয় হইয়া পুৱী ধ্বংস করিবে না তো ? এদিকে র্তাহার পূর্বপুরুষেরা উৎকণ্ঠিত নেত্ৰে যেন র্তাহার দিকে চাহিয়া আছেন, তাহাদের বিশীর্ণ বায়ুভূত নিরাশ্রয় মূৰ্ত্তি যেন র্তাহাকে শয়নে-উপবেশনে ও জাগরণে দেখা দিতে লাগল। দারুণ যন্ত্রণায় রাজা স্বর্ণ-পালঙ্কে শুইয়া ছট্‌ফট্‌ করিতে লাগিলেন। সহসা এক দিন গভীর রাত্রে তিনি এক স্বপ্ন দেখিয়া অভিভূত হইয়া পড়িলেন ; যেন তিনি প্ৰবেশ করিয়াছেন এক অলৌকিক রাজ্যে, তাহার চতুর্দিক হইতে কোকিলের কুহু কুহু শব্দ ভাসিয়া আসিতেছে-কিন্তু একটি কোকিলও দেখা যায় না ; যেন শত শত কুসুমের গন্ধ লইয়া মলয় সমীর র্তাহার ঘরে প্রবেশ করিতেছে, অথচ কোন ফুল-বাগান নাই। সেখানে 'কামর্টুঙ্গী’ঘরে * প্ৰদীপ জ্বলিতেছে,—তাহার কিরণে চতুদিক ঝলমল করিতেছে অথচ সেই ঘরখানি কি বৈকুণ্ঠে, অথবা অলকায় কিম্বা কৈলাসে তাহা তিনি বুঝিতে পারিলেন না। এই অপূর্ব স্থান হইতে তিনি যাহা শুনিলেন তাহাতে তাহার গণ্ডদ্বয় প্লাবিত করিয়া অজস্র অশ্রু পড়িতে লাগিল । তিনি সেই রাত্ৰে পাশের কক্ষে যাইয়া নিদ্রিত রাণীর শিয়রে বসিলেন ; একখানি স্বর্ণ-প্ৰতিমার ন্যায়। রাণী কমলা শুইয়াছিলেন। দেহের নিৰ্ম্মল

  • * কাম টুঙ্গী-আসবাবপত্র সহ সুসজ্জিত ঘর, সচরাচর ইহা দীঘির পারে নিৰ্ম্মিত হইত।