পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বাংলার পুরনারী পবিত্র মাধুরীতে যেন গৃহখানি স্বগীয় সুষমায় ভরপুর করিয়া রাখিয়াছে— রাজা তাহার স্নেহ-শীতল হস্তে রাণীর অঙ্গ সম্পর্শ করিলেন । রাণী জাগিয়া উঠিয়া দেখিলেন, স্বামী তাহার শিয়রে বসিয়া কাদিতেছেন। র্তাহার স্বামী দৃঢ়চেতা, তাহার কোন দুর্বলতার চিহ্ন তিনি কখনও দেখেন নাই । অতি করুণ ও শোকাৰ্ত্ত ভাবে তিনি রাজাকে আদর করিয়া তাহার দুঃখের কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। রাজার অশ্রু তখনও থামে নাই। তিনি গদ গদ কণ্ঠে বলিলেন—“আমি বড় একটা দুঃস্বপ্ন দেখিয়াছি, আমি যে এত গভীর করিয়া দীঘি কাটাইলাম, তাহাতে জানি না কোন গ্রহের দোষে জল উঠিল না, দীঘি খুব গভীর হইয়াছে, তথাপি তাহ শুষ্ক—জলশূন্য। স্বপ্নে দেখিলাম, তুমি সেই গভীর পুকুরে নামিতেছ, এবং তুমি তলদেশে পদার্পণ করা মাত্র, যেন মেদিনী ভেদ করিয়া জলরাশি ভয়ানক তোড়ে উঠিতে লাগিল—এবং তোমাকে ভাসাইয়া লইয়া গেল। সেই জল যেন পাতাল হইতে উঠিয়া আমার রাজ্য আক্রমণ করিল, জল-স্থল একাকার হইয়া গেল । “আমার মন বিষম আতঙ্কে কঁাপিয়া উঠিল, কোন দৈব আমাকে যেন দীঘি কাটাইতে প্ৰবৃত্ত করিয়া আমার সর্বনাশ সাধনের সঙ্কল্প করিয়াছে। রাণী, আমি রাজ্য চাই না,—ঐশ্বৰ্য্য, ধনদৌলত কিছুই চাই না, পাতার কুটিরে তোমাকে লইয়া থাকিব। হায়! তোমাকে হারাইয়া আমি জীবন রাখিতে পারিব না, স্থির জানিও ।” কিম্বদন্তী আছে, যদি খনিত দীঘিতে জল না উঠে, তবে দীঘির স্বামী বা গৃহলক্ষ্মী আত্মোৎসর্গ করিলে জল নিশ্চয়ই উঠিবে। রাজা শিয়রে বসিয়া কঁদিতেছেন, সেই মৰ্ম্মভেদী দীর্ঘশ্বাস ও অফুরন্ত চোখের জলে রাণী কি ইঙ্গিত পাইলেন জানি না, কিন্তু সেই মধ্য রাত্রেই রাণী ধীর পাদক্ষেপে বার-বাঙ্গলা ঘরে তঁহার পরিচারিকাদের নিকটে চলিয়া গেলেন । রাণী। ডাকিয়া বলিলেন “তোরা সব ওঠ,-আমি সুন্নান করিতে সোমেশ্বরী নদীতে যাইব,- তোরা আমার সঙ্গে আয় ।” দাসীরা বঁটাক বাধিয়া রাণীর সঙ্গে চলিল। কাহারও কক্ষে সোণার কলসী, মণিমণ্ডিত স্বর্ণঝারি, কারও হাতে অতি পরিপাটী কারুখচিত গামছা,