পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাণী কমলা . A ভিড় হইল।--তাহারা মহারাণীকে পায় হঁটিয়া নদীর দিকে যাইতে দেখিয়া অব্যক্ত শোকে কঁাদিয়া আকুল হইল। কেউ বলিল, রাজা কি স্বপ্ন দেখিয়াছেন, তাহার মস্তিষ্ক কি ঠিক আছে, রাণী এ ভাবে পদব্ৰজে পুকুরের দিকে যাইতেছেন কেন ? মা-তুমি রাজবাড়ীতে ফিরিয়া এস, তুমি কি করিয়া বসিবে, আমরা ভাবিয়া পাইতেছি না, আমরা বড় কষ্ট পাইতেছি। “কিসের দীঘি, কিসের স্বপন নাই সে উঠুক পানি। এই গহিন পুকুরে যেন না। যাউনা মা রাণী।” রাণী সেই শুকনো পুকুরের তলদেশে নামিলেন,—তথায় ফুল দুৰ্বাদল ও ধান্য ছিটাইয়া দিলেন এবং এক অঞ্জলি জল সেই দীঘির তলদেশে ছড়াইলেন । অনির্দিষ্ট আশঙ্কায় শত শত লোক পাড়ে দাড়াইয়া ‘হায় হায়” করিতে লাগিল। রাণী মৃদুস্বরে প্রার্থনা করিলেন—“কায়মনোবাক্যে আমি যদি ধৰ্ম্ম রক্ষা করিয়া থাকি, তবে পুকুর জলে ভৰ্ত্তি হউক, আমার স্বামীর পিতৃকুল রক্ষা পাউন। যদি আমি চিরদিন ধৰ্ম্মের প্রতি আচল ভক্তি রাখিয়া থাকি, তবে যেন আমার প্রভুর মনোবাঞ্ছা সিদ্ধ হয়। পুকুর যেন জলে ভৰ্ত্তি হয়। পাতাল ভেদ করিয়া বন্যা এস-আমাকে ভাসাইয়া লইয়া যাও।” হাত উচু করিয়া রাণী কলসী হইতে জল ছিটাইতে লাগিলেন। এ যাদু-কলসীর জল কি ফুরাইবে না ? যতই রাণী জল ঢালিতে লাগিলেন,—ততই ভরা কলসী ভরাই রহিল । জল ছড়াইয়া ফেলিতে ফেলিতে অকস্মাৎ আস্তে আস্তে পুকুরের তলা হইতে জল নিঃসৃত হইয়া রাণীর পায়ের দুখানি পাতা ভিজাইয়া ফেলিল। হাত উদ্ধে উঠাইয়া রাণী আরও জল ছিটাইতে লাগিলেন, রাণীর হাঁটু পৰ্যন্ত জলমগ্ন হইল ;-জল ঢালিতে ঢালিতে রাণীর মৃণাল-শুভ্ৰ গ্ৰীবাদেশ জলমগ্ন হইয়া গেল-তার পর সেই স্বর্ণমূৰ্ত্তি একেবারে জলে ডুবিয়া গেল। তখন সেই জলের বেগ ক্রমশঃ বাড়িয়া চলিল,-যেন হুঙ্কার করিয়া জলদেবী পাতালের রুদ্ধ জলপথ ছাড়িয়া দিলেন, রাণীর মাথার সুচিকণ বেণী অবৰ্ত্তের উপর ভাসিতে লাগিল, আর একটু পরে রাণীর আর কিছুই দেখা গেল না, অগ্নিপাটের শাড়ীর