পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

yo বাংলার পুরনারী অঞ্চল ক্ষণেকের জন্য তরঙ্গের উপর নাচিয়া চলিল-পরীক্ষণে আর কিছুই নাই ; প্রবল বেগে জল উপরে উঠিয়া পুকুরের পাড় ভাসাইয়া ছুটিল রাণীর জন্য শোকার্তা রাজার বিলাপ রাজা পাগলের মত ছুটয়া ‘হায় রাণী’ ‘হায় আমার কমলা’ বলিয়া কঁাদিতে কঁাদিতে উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়াছেন, নগরের লোকেদের কুটির জলের তোড়ে ভাসিয়া যায়, সে দিকে দৃকপাত না করিয়া তাহারা ‘হায়! রাণীমা’ ‘হায়! পুৱালক্ষ্মী’ বলিয়া চিৎকার করিয়া কঁাদিতেছে, প্ৰথম পুত্ৰ লাভ করিয়া জননী তাহার দিকে না চাহিয়া ‘হায় মা রাণী’ বলিয়া কঁাদিয়া আকুল হইতেছে। বনের পাখীরা তখন আকাশে উড়িয়া উড়িয়া কলরব করিয়া কঁাদিতেছে, রাজতন্তীর গণ্ড বহিয়া অশ্রু পড়িতেছে, পিঞ্জরের পাখীগুলি যেন কি হারাইয়া ছুটা ছুটী করিতেছে ও স্বর্ণ শলাকা গুলিতে মাথা খুড়িতেছে। রাজার পাত্ৰ-মিত্ৰ সভাসদ সকলের বাস্পরুদ্ধ কণ্ঠে কথা ফুটিতেছে না । রাজার উদ্যানে কলি ফুটিতেছে না, প্ৰস্ফুট ফুল অকালে মান হইয়া যাইতেছে। প্ৰজারা দলে দলে সোমাই নদীর তীরে আসিয়া কঁাদিয়া বলিতেছে, “আমাদের রাজ-লক্ষ্মীকে কালা পানির ঢেউ কোথায় ভাসাইয়া লইয়া গেল।” সমস্ত দেশময় যেন বিজয়া দশমীর বিসর্জনের বাদ্য বাজিয়া উঠিল, কে কাহাকে প্ৰবোধ দিবে তাহার ঠিকানা রহিল না । রাজ-সিংহাসন শূন্য-রাজা তাহাতে বসেন না। শূন্যে যখন পাখীরা উড়ে, তখন তাহা ভৰ্ত্তি হইয়া যায়—তাহাই শূন্যের শোভা। আসমানে রবি, চন্দ্ৰ উঠিলে তাহার পূর্ণত হয়—নতুবা আসমান ধুধু আঁধার, শ্ৰীশূন্য। বাড়ীতে ফুলের বাগান না থাকিলে, নারীর কপালে সিন্দুর না থাকিলে, গৃহে পুরুষের পার্শ্বে নারী না থাকিলে কে তাহদের দিকে ফিরিয়া চায়।