পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাণী কমলা SN) সোণার বাটায় পান সুপারি।-চুয়া-চন্দন লইয়া সুয়া-দাসী ঘরে যাইয়া দরজা আঁটিয়া বঁধিল । কুমারকে পালঙ্কে শোয়াইয়া নিজে তাহার পাশ্বে শুইল । এদিকে দ্বিপ্রহর রাত্ৰিতে রাজা তাহার বাহির বাঙ্গালাঘর হইতে রাণীকে দেখিতে বাহির হইলেন। তখন পৃথিবী স্তব্ধ- সেই বিশালপুরীর একটি লোকও জাগিয়া নাই। পুকুরের চারি পারে ফুলের গাছ, বাতাস নাই, ফুলগুলি হেলেও না দোলেও না, চিত্রপটের মত স্তব্ধভাবে দণ্ডায়মান। রাজা সকল পার ঘুরিয়া পাগলের মত, দীঘির যে দিকে পুব-দুয়ারী কুমারের ঘর, সেইদিকে চলিয়া আগিলেন । তখন প্ৰায় ভোর হইয়া আসিয়াছে। সুপ্তোখিত সোণার কোকিলের কণ্ঠের জড়তা তখনও যায় নাই, তাহার আধ আধা ভাঙ্গা সুর থমকিয়া আকাশের কোণে শোনা যাইতেছে। এই সময় পাগল রাজা যেন বাহজ্ঞান হারাইলেন । তখন সূৰ্য্যোদয় আসন্ন। সে কোন পাহাড়ের সর্বোচ শৃঙ্গের মাণিক ! একটি মাত্র মাণিকের প্রভায় চােদভূবন আলোকিত করিতেছে! কোন জন একটি ঘরে মাত্র বাতি জ্বালাইলেন, সেই একটি বাতিতে সবগুলি ঘর আলোকিত হইয়া উঠিল। পূব দিকের সমুদ্রে সূৰ্য্য স্নান করিলেন, সেইখানে খানিক দাড়াইয়া প্ৰসাধন করিলেন, উষা-কন্যার সহিত মিলিত হইতে যাইবেন । তারপর নিজপুরীর দিকে যাইবার জন্য রথখানি প্ৰস্তুত করিতে অনুমতি করিলেন, উজ্জ্বল বর্ণ অশ্ব,-দুধের ন্যায় সাদা সমস্ত শরীর, তাহার পাখা দুইটি আগুনের বর্ণ। ক্ষিপ্ৰতায় সে ঘোড়া বাতাসকে হারাইয়া দেয়-গতির চক্রাকার আবৰ্ত্তে—সে ঘোড়াকে ঘোড়া বলিয়া চিনিবার উপায় নাই । পূব পাহাড়ের পথে রথ উষার সঙ্গে মিলনের জন্য রওনা হইল। এই সময় পাগল রাজা আলুথালু বেশে, জাগরণ ক্লান্ত চােখে-উস্ক শুষ্ক মুখে সেই ঘরের দ্বারে আসিয়া দাড়াইলেন । “সুয়া দ্বার খোল, আমি আর সহ্যু করিতে পারিতেছি না, একবার রাণীকে দেখাইয়া আমার প্রাণ বঁাচাও।”