পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাণী কমলা SA গেল। রাণীর রূপ এমনই স্পষ্ট ও তাহার স্বর এমনই মিষ্ট যে রাজা তাহা স্বপ্ন বলিয়া ভাবিতে পারিলেন না । তিনি মনে করিলেন, রাণী সত্যসত্যই আসিয়া দেখা দিয়া গিয়াছেন। ‘শরীরের মধ্যে পাইতেছি রে রাণীর অঙ্গের পরাশন ।” এই স্পর্শ এই আদর কখনও মিথ্যা হইতে পারে না। আমার কি কাল নিদ্ৰাই পাইয়াছিল, হায় ! তিনি আসিয়াছিলেন, আমি কেন তাহাকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া রাখিলাম না । “তাকে পাইয়া হারাইলাম নিজ কৰ্ম্ম দোষে দারুণিয়া ঘুম এসেছিল আমার চক্ষুদুটির পাশে।” পরদিন দীঘির পারে, পূব-দুয়ারী ঘর তৈরী হইল। তাহাতে কোমল শয্যা প্ৰস্তুত হইল, ঘুম পাড়ানিয়া দাসীরা কুমারকে সন্ধ্যার সময় বেড়াইয়া লইয়া আসিয়া সেই শয্যায় শোওয়াইয়া চলিয়া গেল। রাজার মনে হইতে লাগিল, যেন দীঘির জল হইতে এক মহিমাময়ীমূৰ্ত্তি স্নেহের আবেগে দুই হাত বাড়াইয়া নূতন ঘরে ঢুকিলেন। এইরূপ প্রতিদিন শিশু কুমার রঘুনাথ একাকী শয্যায় থাকেন, কিন্তু র্তাহার কান্তি দিন দিন বাড়িয়া চলিতেছে, ছয় মাসের মধ্যে শরীর বলিষ্ঠ ও রূপবন্ত হইয়া উঠিল। রাজার মনে নিশ্চয় বিশ্বাস হইল, সত্যই রাণী পুত্র-স্নেহে সেইখানে আসেন এবং তাহাকে স্তন্য দান করেন-না হইলে শিশু ইহার মধ্যে এমন অলৌকিক রূপ ও কান্তি কোথায় পাইবে ? একদিন রাজা মনে স্থির করিলেন, আজ আমি নিশ্চয়ই রাণীকে একবার দেখিব। ঘুমের ঘোরে একদিন তাহাকে পাইয়াও হারাইয়া ছিলাম, আজ আর সেইরূপ ভুল হইবে না। আমি যেরূপে পারি, তাহাকে ধরিয়া রাখিব । রাণী প্ৰতি রাত্ৰেই আসেন, রাজার আদেশে সেই শয্যার এক কোণে সোনার বাটায় সুগন্ধি পান, ও চুয়া-চন্দন রাখিয়া দেওয়া হইত। কিন্তু রাণী তাহা স্পর্শও করেন না ।