পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাণী কমলা ܦܬܠ দীঘির একটি কোণ হইতে এক অপূর্ব জ্যোতিঃ ফুটিয়া উঠিয়াছে এবং ক্ষণপরে এক জ্যোতিৰ্ম্ময়ী মূৰ্ত্তি ধীরে ধীরে উঠিয়া দীঘির পারে চলিয়াছেন। রাজা দুটি চক্ষুর সমগ্ৰ দৃষ্টি সেই মূৰ্ত্তির দিকে নিবদ্ধ করিয়া বুঝিলেন—এ র্তাহারই কমলা রাণী-যাহার জন্য তিনি এই ছয় মাস বিলাপ করিয়া কঙ্কাল-সার হইয়াছেন। আমনই সেই শীর্ণ শরীরে অসামান্য শক্তির সঞ্চার হইল, তিনি সেই মূৰ্ত্তির পাছে পাছে উম্মত্তের ন্যায় ছুটলেন। রাণী নূতন ঘরে প্রবেশ করিয়া শিশুকে স্তন্য পান করাইলেন এবং তাহার পর শিশুর চোখের উপর তাহার কোমল কর বুলাইয়া ঘুম পাড়াইলেন। তখন রাত্ৰি প্ৰায় শেষ হইয়া আসিয়াছে—প্ৰভাতের বায়ু যেন দূর দিল্মণ্ডল হইতে মাঝে মাঝে আসিয়া সুপ্তের চােখের ঘুম আরও গাঢ়তর করিয়া দিতেছে। যখন রাণী বাহির হইয়া আসিতেছিলেন, আমনই রাজা তঁহাকে জড়াইয়া ধরিলেন ; তঁহার চক্ষু দুটি কঁাদিয়া জবা ফুলের মত লাল হইয়াছে, “রাণী কমলা, আমাকে ফেলিয়া যাইও না, আমি আর তোমার বিরহ সহ্যু করিতে পারিতেছি না ; না হয় তুমি যেখানে যাইতেছ, আমাকে সেইখানে লইয়া যাও।” উন্মত্ত বেগে রাণী ছুটিয়াছেন, উন্মত্ত বেগে রাজা পিছু পিছু যাইতেছেন ; হঠাৎ রাণী সেই সায়রে কঁপাইয়া পড়িলেন, রাজা তঁহার আঁচল দৃঢ়মুষ্টিতে ধরিয়া বলিলেন “এ কাল দীঘিতে যাইও না, রাণী ! দোহাই তোমার।” বাকী রাত্রিটুকু রাজা সঁতিরাইয়া দীঘির সেওলা হাতড়াইয়া কাটিয়া দিলেন। প্ৰাতে লোকে দেখিল—দীঘির মধ্যে এক রূপবান কুশ মূৰ্ত্তি। রাজাকে চিনিতে বিলম্ব হইল না। র্তাহার সমস্ত শরীর পান। সেওলা ও পদ্ম-পুকুরের পদ্মের নালে। আচ্ছন্ন ; চক্ষু छू লাল, কথা বলিবার শক্তি নাই, হস্তে দৃঢ় মুষ্টিতে রাণীর অগ্নিপাট শাড়ীর অঞ্চলের একটি অংশ ধরিয়া আছেন। এই ভাবে রাজার মৃত্যু হইল। সকলে বলিল, “এ শাড়ীর অংশ রাজা কিরূপে পাইলেন ? হয়ত তেঁাহার মনের একাগ্ৰতা ও ভালবাসার আবেষ্টনীর মধ্যে রাণীর স্মৃতির এই অংশটুকু রূপায়িত হইয়া উঠিয়াছিল ! এই বস্ত্রাংশ কোন তঁাতি বা জোলা তৈরী করে নাই, উহা তাহার মনের সৃষ্টি-প্ৰেম যে অমর তাহারই নিদর্শন।