পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 বালার পুরনারী কমলা রাণী একটা প্ৰাচীন সংস্কারের বশবৰ্ত্তী হইয়া জীবন বিসর্জন দিয়াছিলেন। নূতন খণিত দীঘিতে জল না উঠিলে লোকে নরবলি দিত। এইরূপ বিশ্বাস ছিল যে দীঘি কাটাইতে আরম্ভ করিয়া জল না উঠা পৰ্য্যন্ত কাজ থামাইলে দীঘি-স্বামীর চৌদ্দ পুরুষ নরকস্থ হয়। এই সংস্কারটা সামাজিক গুরুগণ জন-হিত কল্পেই লোকের মনে সুদৃঢ় সংস্কারে পরিণত করাইয়া ছিলেন । তখনকার দিনে জলাশয় খনন না করিলে কোন পল্লী বা নগরীই বাসযোগ্য হইত না । অথচ জন-সাধারণ ছিল দরিদ্র ও সহায়হীন,-দৈবে কখনও প্রচুর বর্ষণ হইত, কখনও নিমেঘ আকাশ মাসের পর মাস ভ্ৰকুট করিয়া থাকিত, এক বিন্দু জল ও দিত না। রাজা বা ধনী ব্যক্তিরা খাম-খেয়ালি । দীঘি খনন করিতে আরম্ভ করিয়া সহজে জল৷ না উঠিলে হয়ত তাহারা বিরক্ত বা আসহিষ্ণু হইয়া কাৰ্য্য বন্ধ করিতে ইচ্ছুক হইতে পারিতেন,-কিন্তু পূর্ব-পুরুষেরা নরক-বাসী হইবেন—এই অনুশাসনের ফলে দীঘি জল-দানের যোগ্য না হইবার পূর্বে কেহ নিবৃত্ত হইতেন না। অপর একটা সংস্কার কুসংস্কারে দাড়াইয়াছিল। যদি পুকুরে কোন ব্যক্তিকে উৎসর্গ করিয়া ফেলিয়া দেওয়া হইত, কিম্বা কর্তৃপক্ষের কেহ আত্মদান করিতেন। তবে পুকুরে জল উঠিবে লোকের মনে এইরূপ একটা ধারণাও ছিল । শুঙ্কোদ্বারের জন্য দুশ্চিন্তায় রাজা বড়ই বিবৃত হইয়া পড়িয়াছিলেন। পাহাড়িয়া দেশ, সেখানে সহজে দীঘি কাটিয়া জল আনা যায় না। এজন্য বহু চেষ্টার ফলে দীঘি অতি গভীর করিয়া খনন করিলেও যখন জল পাওয়া গেল না, রসাতল রস-শূন্য হইয়া জল দানে কুষ্ঠিত হইলেন, তখন দুর্ভানায় বিচলিত রাজা স্বপ্নে দেখিলেন যেন কমলারাণী জলে নামিতেছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন হইতে জলের ফোয়ারা নিঃসৃত হইতেছে। দুৰ্ভাগ্য বশতঃ রাজা রাণীকে স্বপ্নের বৃত্তান্ত বলতে অনর্থ উৎপাদিত হইল। রাণী এই স্বপ্নে র্তাহার আত্মদানের ইঙ্গিত বুঝিতে পারিয়া দীঘিতে জীবনদান করিতে কৃতসংঙ্কল্প হইলেন। একথা সত্য যে রাজা জানকীনাথ মল্লিক। তঁহার স্ত্রীর নামে “কমলাসায়ার” নামক প্ৰকাণ্ড একটি দীঘি কাটাইয়া ছিলেন, একথাও সত্য যে