পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRV বাংলার পুরনারী অথচ কি গভীর তীর প্ৰেম, যিনি স্বামীর পূর্বপুরুষদের জন্য অকাতরে রাজস্বামী, চোখের পুতুল দুধের ছেলে এবং রাজৈশ্বৰ্য্য পরিত্যাগ করিয়া জীবন আহুতি দিয়াছেন! পূর্বাধ্যায়ের কবি গল্পটি কবিত্বের ইন্দ্ৰজালে মণ্ডিত করিয়াছেন। যেখানে সখীরা রাণীর সঙ্গে নদীতে স্নান করিতে চলিয়াছেন ; সেখানকার চিত্র কি সুন্দর ! যেখানে বিরহী রাজার চোখের সামনে ধীরে ধীরে সূৰ্য্যোদয় হইতেছে, সে দৃশ্যটি বৈদিক ঋষির উষার কথা মনে করাইয়া দেয়। “কোন পাহাড়ে জ্বলে মাণিক এমন প্ৰবল। @क भारिक cोक फूदन कब्रिन उंख्यान ॥ কোন জনে জ্বালাইল বাতিরে এমন আধার ঘরে । এক ঘরে জালাইলে বাতি সকল উজ্জল করে ॥” কবি-প্ৰসিদ্ধির ধার কবি অধরচন্দ্ৰ ধারিতেন না, সূৰ্য্যের সপ্তাশ্বের কথা হয়তঃ তিনি শোনেন নাই। উষা যে সূৰ্য্যের প্রণয়িনী, একথা র্তাহার নিছক কল্পনা ; তথাপি সূৰ্য্যোদয়ের যে বর্ণনা তিনি দিয়াছেন তাহা ঋগ্বেদের সূক্তের ন্যায়ই সরল এবং সৌন্দৰ্য্য মণ্ডিত। সূৰ্য্যের রথের ঘোড়াটির দুইটি আগুন বর্ণের পাখা। স্নানান্তে সূৰ্য্যদেব উষার সঙ্গে মিলিত হইতে যাইতেছেন, সেই চিত্রটি পাঠক মূল গান হইতে পড়িয়া দেখিবেন, আমার কি সাধ্য যে পল্লী-কবির সরল বিবৃতির পদমাধুৰ্য্য রক্ষা করিব ! আমরা যাহা বলি তার অৰ্দ্ধেকটার ভাষা ধারকরা, কালিদাস-সেক্ষপীয়র প্রভৃতি মহাকবিগণের কথা আমাদের লিখিবার সময় মনের মধ্যে উকি ঝুকি দিয়া আনাগোণা করিয়া রস ভঙ্গ করিয়া দেয়, তারপর অভিধান তো শব্দের ভাণ্ডার খুলিয়াই আছে, সেই সকল ধার-করা শব্দ দ্বারা ভাব যতটা না প্ৰকাশ পায়, জটীল ও গুরু শব্দের আবর্জনায় তাহা ততোধিক পরিমাণে চাপা পড়ে । ইহা ছাড়া অলঙ্কারশাস্ত্রের কৃত্রিম উপাদান-উৎপ্রেক্ষা, উপমা প্ৰভৃতি আমাদের ভাষাতে ক্ৰমাগত প্ৰচ্ছন্ন থাকিয়া জাল বুনিতে থাকে। কিন্তু এই সকল পল্লী-কবি মোটেই ঐ সকল সংস্কারের অধীন হন নাই-তাহদের একমাত্র গুরু প্ৰকৃতি । সাক্ষাৎ দর্শন, সাক্ষাৎ শ্রবণই তাহদের গল্প গড়িবার একমত্ৰ উপাদান।