পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাণী কমলা S এজন্য তাহাদের কথায় একটিও আবান্তর শব্দ নাই । তাই, বৰ্ণনা এত সরল সংক্ষিপ্ত ও উপাদেয়। র্তাহারা যখন করুণ রসের ছবি আঁকেন, তখন যেন র্তাহাদের প্রতিছত্ৰ হইতে অশ্রু বারিয়া পড়ে,-যখন কোন চরিত্র অঙ্কন করেন, তখন দুকথায় সরল স্পষ্ট চিত্ৰ ফুটিয়া উঠে, যদিও সে রচনা সংক্ষিপ্ত, তথাপি তাহাতে প্ৰাকৃতিক সৌন্দৰ্য্য যথার্থভাবে প্ৰতিবিম্বিত হয় ; বর্ণনার বাহুল্য নাই-পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ব্যাপিয়া সূৰ্য্যোদয় বা সূৰ্য্যাস্তের উল্লেখ নাই, অথচ দুই একটি পংক্তিতে যেন কবি, প্ৰাকৃতিক বৈভব হইতে মণি-মুক্তা খুজিয়া বাহির করেন, প্ৰকৃতি যেন পরম কৃপায় এই পল্লী-কবিদের সঙ্গে নিজে কথাবাৰ্ত্তা বলেন । সুতরাং যাহারা মূল কবিতাগুলি পড়িবেন, তাহারা আমার বর্ণনা পড়িয়া গল্পের কাব্যভাবের প্রকৃত স্বাদ পাইবেন না। যদি আমার এই লেখায়—মূল গীতিকাগুলি পড়িবার জন্য আমি কৌতুহল উদ্রেক করিতে পারি, তবেই আমার লেখা সার্থক মনে করিব । জানকীনাথ মল্লিকা আকবরের সমকালিক ! গল্পের রঘুনাথকে অতি শৈশবে গাড়ো প্ৰজারা জীবনপণ করিয়া ইশা খায়ের বন্দীশালা হইতে উদ্ধার করিয়াছিল, এই কথার মধ্যে অবশ্যই কিছু সত্য ছিল। কিন্তু সেই রঘুনাথ মোগল সম্রাটের বিরুদ্ধে গোড়ার বিদ্রোহ করিলে এই পাহাড়িয়া প্ৰজাদিগের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান করিয়া তাহাদিগকে দমন করেন। সেই কাজের পুরস্কার স্বরূপ জাহাঙ্গীর রঘুনাথকে রাজা উপাধি এবং খেতাব প্ৰদান করেন ; গাড়োরা অতি সরল সাহসী ও বিশ্বস্ত, লোক, তাহারা সাধারণতঃ রাজভক্ত, কিন্তু কি কারণে তাহারা বিদ্রোহী হইল এবং কেনই বা রঘুনাথ সিংহ, যিনি ইহাদের প্রাণপণ চেষ্টার ফলে অতি শৈশবে ইশা খাঁর মত প্ৰবল শত্রুর হস্ত হইতে ত্ৰাণ পাইয়াছিলেন, সেই পরম কৃতজ্ঞতার পাত্ৰ প্ৰজাদিগের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করিলেন, এই জটিল ঐতিহাসিক সমস্যার আমরা এখনও সমাধান করিতে পারি নাই। রাজবাড়ীর দলিল পত্র ও মুসলমান ঐতিহাসিকগণের মোগল ইতিহাসের বিবরণের কোন স্থানে হয়ত এমন কিছু আছে, যাহা সুসুঙ্গ দুর্গাপুরের ইতিহাসের এই অন্ধকার অধ্যায়ের উপর ভবিষ্যতে আলোপাত করিতে