পাতা:বাংলার পুরনারী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO)e বাংলার পুরনারী মেয়ে’ বলিয়া কেহ তাতাকে বিবাহ করিতে রাজী হইল না । সদাগর যেন অকুল সমুদ্রে পড়িয়া হাবুডুবু খাইতে লাগিলেন। এমন দুদিনে এক জটাজুট সমন্বিত সন্ন্যাসী আসিয়া তাহাকে একটি “শ্ৰী” চিহ্নাঙ্কিত মানিকের আংটী ও একটি শুক পাখী উপহার দিলেন। বণিক কঁাদিয়া তাহার পায়ে লুটাইয়া পড়িলেন।—সন্ন্যাসী বলিলেন, “এই শুক পাখিটির নাম “ধৰ্ম্ম-মতি” । ইহার পরামর্শ মত কাজ করিলে তোমার বিপদের অনেকটা কাটিয়া যাইবে।” শুকটি অতি-বৃদ্ধ ; তাহার লঙ্কার মত টকটকে লাল দুটি ঠোঁট বয়সের দরুন ধূসর বর্ণ ধারণ করিয়াছে, পক্ষ দুটির সবুজ রং—মলিন হইয়াছে এবং স্থানে স্থানে পালক খসিয়া পড়িয়ছে-গ্রীবার রামধনু, রং-এমন কি মাংস পৰ্য্যন্ত উঠিয়া গিয়া একটি শীর্ণ কাঞ্চীর মত দেখাইতেছে। কেবল দুইটি দীপ্ত চােখের জ্যোতি কমে নাই, বরং আরও বাড়িয়াছে,- সে দৃষ্টি এত তীক্ষ যেন তাহা ভবিষ্যতে ও অতিতের যবণিকা ভেদ করিয়া সত্যের আলোক দেখিতে শক্তিমান । সাধু শুকের নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন—“শুক, আমার দুৰ্দশা দেখ। আমার রত্ন-মন্দির, জল টুঙ্গি’ ‘কাম টুঙ্গি’ * ও মণিমণ্ডিত আরামগৃহ ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে। একটা মাদুর পর্য্যন্ত নাই, মাটিতে শুইয়া থাকিএকটা গাড় কি পাত্ৰ নাই—অঞ্জলীতে করিয়া জল পান করি, পথের ফকিরের মত বনে বনে ঘুরিয়া বেড়াই। এই বংশের শেষ বাতিস্বরূপ একটি কন্যা ও একটি পুত্ৰ বিদ্যমান, এই দুই সন্তানকে কি দিয়া প্ৰতিপালন করিব ?” বলিতে বলিতে সদাগরের দুই চক্ষু জলে ভাসিয়া গেল ।

  • জল টুঙ্গি ও কাম টুঙ্গী,-গ্রীষ্মকালে নদী বা পুকুরের মধ্যে উখিত গৃহ বিশেষ ; বড় মানুষদের গৃহ-প্ৰাঙ্গনে পদ্ম পুকুরে ‘জল টুঙ্গী’ ঘর নিৰ্ম্মিত হইত, শীতল পদ্মগন্ধযুক্ত বাতাসে সুখ-নিদ্রা হইত। ‘কাম টুঙ্গী’ও সেইরূপ আরাম গৃহ, তাহার সাজসজা বৈঠকখানার মত হইত, তবে ‘কাম টুঙ্গী’ ঘর ঠিক জলের মধ্যে নিৰ্ম্মিত হইত না । পুকুর পাড়ে তৈরী হইত।