পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাহা কে বলিবে। নি যােগে বহুতর বাংলা স্ত্রীলিঙ্গ শব্দের উৎপত্তি হইয়াছে— কামাৱনি খােট্টানি ইত্যাদি। কিন্তু বদ্যিনি (বৈদ্য-স্ত্রী) কেহ তাে বলে না; উড়েনি বলে, কিন্তু পাঞ্জাবিনি বা শিখিনি বা মগিনি বলে না। বাঘিনি হয়, কিন্তু উটিনি হয় না, কুকুরনি বেড়ালনি হয় না। প্রত্যয়যােগে স্ত্রীলিঙ্গ অনেক স্থলে হয়ই না, সেই কারণে মাদি কুকুর বলিতে হয়। পাঁঁঠার স্ত্রীলিঙ্গে পাঠি হয়, মােষের স্ত্রীলিঙ্গে মােষি হয় না। এ-সমস্ত অনুধাবন করিবার যোগ্য।

  কোন্ প্রত্যয়যােগে শব্দের কী প্রকার রূপান্তর হয় তাহাও নিয়ম করিয়া লেখা আবশ্যক। নিতান্তই সময়াভাব-বশত আমি সে কাজে হাত দিতে পারি নাই। নােড়া শব্দের উত্তর ই প্রত্যয় করিলে হয় নুড়ি; দাড়ি শব্দের উত্তর আ প্রত্যয় করিলে হয় দেড়ে; টোল শব্দের উত্তর আ প্রত্যয় করিলে টুলাে; মধু শব্দের উত্তর আ প্রত্যয় করিলে হয় মােধো; লুন্ শব্দের উত্তর আ প্রত্যয় করিলে হয় লােনা; জ্বল্ শব্দের উত্তর অন্+ই প্রত্যয় করিতে হয় জ্বলুনি, কোঁঁদল শব্দের উত্তর ই+আ প্রত্যয় করিলে হয় কুঁদুলে।

  কতকগুলি প্রত্যয় আমি আনুমানিক ভাবে দিয়াছি। সেগুলিকে প্রত্যয় বলিয়া বিশ্বাস করি, কিন্তু শব্দ হইতে তাহাদিগকে বিচ্ছিন্ন করিয়া তাহাদের প্রত্যয়রূপ প্রমাণ করিতে পারি নাই। যেমন, অং প্রত্যয়; ভুজং ভড়ং প্রভৃতি শব্দের অং বাদ দিলে যাহা বাকি থাকে তাহা বাংলায় চলিত নাই। ভড়্ শব্দ নাই বটে, কিন্তু ভড়্‌কা আছে, ভড়ং এবং ভড়কের অর্থসাদৃশ্য আছে। তাই মনে হয়, ভড়্, বলিয়া একটা আদিশব্দ ছিল, তাহার উত্তরে অক্ করিয়া ভড়ক্ ও অং করিয়া ভড়ং হইয়াছে। বড়াং শব্দে এই মত সমর্থন করিবে। আমার কাল্‌না-প্রদেশীয় বন্ধুগণ বলেন, তাঁহাৱা বড়াই শব্দের মূলে বড়াং সর্বদাই ব্যবহার করেন; তাহাতে বুঝা যায় বড়ো শব্দের উত্তর যেন আ+ই প্রত্যয় করিয়া বড়াই হইয়াছে, তেমনই আং প্রত্যয় করিয়া বড়াং হইয়াছে—মূল শব্দটি বড়ো, প্রত্যয় দুইটি আই ও আং।

  প্রত্যয়গুলি কী ভাবে লিখিত হওয়া উচিত, তাহাও বিচারের দ্বারা ক্রমশ স্থির হইতে পারিবে। যাহাকে অস্ প্রত্যয় বলিয়াছি, তাহা অস্ অথবা অ-বর্জিত, সা প্রত্যয়টি স+আ অথবা লা, এ-সমস্ত নির্ণয় করিবার ভার ব্যাকরণবিৎ পণ্ডিতদের উপর নিক্ষেপ করিয়া আমি বিদায় গ্রহণ করিলাম।

১৩০৮