সংস্কৃত শব্দ বাংলা হইয়া যায় নাই, তাহা সংস্কৃতেই আছে, যাহা বাংলা হইয়া গেছে, তাহা বাংলাই হইয়াছে– এই সহজ কথাটা মনে রাখা শক্ত নহে।
কিন্তু কেতাবের বাংলায় প্রতিদিন ইহার ব্যতিক্রম হইতেছে। আমরা জড়-এর জ এবং যখন-এর য একই রকম উচ্চারণ করি, আলাদারকম লিখি। উপায় নাই। শিশু বাংলাগদ্যের ধাত্রী ছিলেন যাঁহারা, তাঁহারা এই কাণ্ড করিয়া রাখিয়াছেন। সাবেক কালে যখন শব্দটাকে বর্গ্য জ দিয়া লেখা চলিত– ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পণ্ডিতরা সংস্কৃতের যৎ শব্দের অনুরোধে বর্গ্য জ-কে অন্তস্থ য করিয়া লইলেন, অথচ ক্ষণ শব্দের মূর্ধন্য ণ-কে বাংলায় দন্ত্য ন-ই রাখিয়া দিলেন। তাহাতে, এই যখন শব্দটা একাঙ্গীভূত হরগৌরীর মত হইল; তাহার–
আধভালে শুদ্ধ অন্তস্থ সাজে
আধভালে বঙ্গ বগীয় রাজে।
সৌভাগ্যক্রমে আধুনিক পণ্ডিতরা খাঁটি বাংলা শব্দকে অবজ্ঞা করিয়া আঁহাদের রচনাপঙ্ক্তির মধ্যে পারতপক্ষে স্থান দেন নাই– কেবল যে-সকল ক্রিয়া ও অব্যয় পদ নহিলে নয়, সেইগুলাকে সংস্কৃত বানানের দ্বারা যথাসাধ্য শোধন করিয়া লইয়া তবে তাঁহাদের লেখার মধ্যে প্রবেশ করিতে দিয়াছেন। এইজন্য অধিকাংশ খাস বাংলা কথা সম্বন্ধে এখনো আমাদের অভ্যাস খারাপ হয় নাই; সেগুলার খাঁটি বাংলা বানান চালাইবার সময় এখনো আছে।
আমরা এ কথা বলিয়া থাকি, সংস্কৃত ব্যাকরণে যাহাকে ণিজন্ত বলে, বাংলায় তাহাকে ণিজন্তু বলা যায় না। ইহাতে যিনি সংস্কৃত ব্যাকরণের অপমান বোধ করেন, তিনি বলেন, কেন ণিজন্ত বলিব না, অবশ্য বলিব। কবিবর নবীন সেন মহাশয়ের দুইটি লাইন মনে পড়ে–
কেন গাহিব না, অবশ্য গাহিব,
গাহে না কি কেহ সুর বিহনে?
ণিজন্ত শব্দ সম্বন্ধেও পণ্ডিতমহাশয়ের সেইরূপ অটল জেদ, তিনি বলেন, ণিজন্ত–
কেন বলিব না, অবশ্য বলিব।
বলে না কি কেহ কারণ বিহনে?
আমরা ব্যাকরণে পণ্ডিত নই, তবু আমরা যতটা বুঝিয়াছি, তাহাতে ণিচ্ একটা সংকেত মাত্র– যেখানে সে সংকেত খাটে না, সেখানে তাহার