পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

‘নিছনি’

তৃতীয়সংখ্যক ‘সাধনা’য় কোনো পাঠক নিছনি শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসা করিয়াছেন; তাহার উত্তরে জগদানন্দবাবু নিছনি শব্দের অর্থ অনিচ্ছা লিখিয়াছেন।[১] কিন্তু প্রাচীন বঙ্গসাহিত্যে অনিচ্ছা অর্থে নিছনির ব্যবহার কোথাও দেখা যায় নাই। গোবিন্দদাসে আছে:

গৌরাঙ্গের নিছনি লইয়া মরি।

স্পষ্টই অনুমান করা যায়, বালাই লইয়া মরি’ বলিতে যে ভাব বুঝায় ‘নিছনি লইয়া মরি’ বলিতে তাহাই বুঝাইতেছে। কিন্তু সর্বত্র নিছনি শব্দের এরূপ অর্থ পাওয়া যায় না। বসন্ত রায়ের কোনো পদে আছে:

পরাণ কেমন করে  মরম কহিনু তোরে,
জীবন নিছনি তুয়া পাশ।

এখানে নিছনি বলিতে কতকটা উপহারের ভাব বুঝায়।

 বসন্ত রায়ের অন্যত্র আছে:

তোমার পিরীতে হাম হইমু বিকিনী,
মুলে বিকলাঙ আর কি দিব নিছনি।

এখানে নিছনি বলিতে কী বুঝাইতেছে ঠিক করিয়া বলা শক্ত। এরূপ স্থলে নিছনি শব্দের সংস্কৃত মূলটি বাহির করিতে পারিলে অর্থ নির্ণয়ের সাহায্য হইতে পারে।

 গোবিন্দদাসের এক স্থলে আছে:

দোঁহে দোঁহে তনু নিরছাই।

এ স্থলে ‘নিছিয়া’ এবং ‘নিরছাই’ এক ধাতুমূলক বলিয়া সহজেই বোধ হয়।

  1. প্রশ্ন: প্রাচীন কাব্যে নিছনি শব্দের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। তাহার প্রকৃত অর্থ কী এবং তাহা সংস্কৃত কোন্ শব্দ হইতে উৎপন্ন। শব্দতত্ত্বান্বেষী। সাধনা, মাঘ ১২৯৮।
    উত্তর: নিছনি শব্দের অর্থ অনিচ্ছা। জগদানন্দ রায়, কৃষ্ণনগর। সাধনা, ফাল্গুন ১২৯৮।