পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৬
বাংলা শব্দতত্ত্ব

আমার শরীর ও মনের অটুট কুঁড়েমি শেষ নৈস্কর্ম্য রাত্রির পূর্বসন্ধ্যা বলে ধরে নিতে পারো। এই নৈঃশব্দ্যের যুগে আমার কাছে শব্দসৃষ্টির প্রত্যাশা নিয়ে এসেছ, কুণ্ঠিত করেছ আমার লেখনীকে। রচনার প্রসঙ্গে পরিভাষা যখন আপনি এসে পড়ে তখন সেটা মাপসই মানানসই হয়। পা রইল এ পাড়ায় আর জুতো তৈরি হচ্ছে ও পাড়ায় ব্যবহারের পক্ষে এটা অনেক সময়েই পীড়াজনক ও ব্যর্থ হয়। অপর পক্ষে নতুন জুতো প্রথমটা পায়ে আঁট হলেও চলতে চলতে পা তাকে নিজের গরজে আপনার মাপের করে নেয়। পরিভাষা সম্বন্ধেও সেরকম প্রায়ই ঘটে।

Harmony-স্বরসংগম বা স্বরসংগতি।
Concord-স্বরৈক্য
Discord-বিস্বর
Symphony—ধ্বনিমিলন
Symphonic―সংধ্বনিক

 সংস্কৃত ধাতুপ্রত্যয় যেখানে সহজে সাড়া না দেয় সেখানে মূল শব্দের শরণ নিয়ো। ভাষায় ম্লেচ্ছ সংস্রবদোষ একদা গর্হিত ছিল। এখন সেদিন নেই―এখন ভাষার অম্নিবাসে ফিরিঙ্গিতে বাঙালিতে ঘেঁষাঘেঁষি বসে।...[১]

 ২৪ নভেম্বর ১৯২৭

১০

···আমার মতে “স্বপ্নাঞ্চিত” কথাটা অন্তত এখনো চলনসই হয় নি— রোমাঞ্চিত কথাটার মানে, রোম carved হয়ে ওঠা— আমি তৃণাঞ্চিত কথা ব্যবহার করেচি— সেটা যদিও অচলিত তবু অচলনীয় নয়। মঞ্জীরকে “তিক্ত” বল্‌লে ভাষায় ফিরিঙ্গি গন্ধ লাগে। ইংরেজিতে bitter কথাটা রসনাকে ছাড়িয়ে হৃদয় পর্যন্ত প্রবেশ করে— বাংলায় “তীব্র” কথাটা স্বাদে এবং ভাবে আনাগোনা করে কিন্তু তিক্ত কথাটাকে অন্তত নূপুরের বিশেষণরূপে চালাবার

  1. শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত পত্র