চঞ্চল নয়ন পাতে উষা প্রতিক্ষণ
লীলা-শতদল নাড়ি দিতেছেন বাধা।
আমরা ‘লীলা-কমলে ভ্রমরা কিয়ে বারি’ ইত্যাদি দুই চরণের যে অর্থ করিলাম সম্পাদকের টীকার সহিত তাহার ঐক্য হয় না। তাহাতে আছে— ‘লীলা-কমলে স্থিত ভ্রমর বা বারিবিন্দুর ন্যায় চঞ্চল নয়নে দৃষ্টিপাত করিয়া চমকিয়া চলিল।’ এ অর্থ যে অসংগত, তাহা মনোযোগ করিয়া দেখিলেই প্রতীতি হইবে—
লীলা-কমলে ভ্রমরা কিয়ে বারি।
চমকি চললু ধনি চকিতে নেহারি।
‘লীলা-কমল’ ও ‘চকিতে নেহারি’ এতদূর; এবং মাঝে ‘চমকি চললু ধনি’ এমন একটা ব্যবধান স্বরূপে পড়িয়াছে যে উহাকে একত্র করিতে গেলে অনেক টানাটানি করিতে হয় ও ‘ন্যায়’ নামক একটা যোজক পদার্থ ঘর হইতে তৈরি করিয়া আনিতে হয়। আমরা যে অর্থ দিয়াছি তাহা ইহা অপেক্ষা সহজ। ‘বারি’ শব্দের অর্থ নিবারণ করা অপ্রচলিত নহে। যথা—
‘পুর-রমণীগণ রাখল বারি।’ সং ১২৩, পৃ. ১০৩
অর্থাৎ পুর-রমণীগণ নিবারণ করিয়া রাখিল।
১১-সংখ্যক গীতে সম্পাদক,
‘একে তনু গোরা, কনক-কটোরা
অতনু, কাঁচলা-উপাম।’
এই দুই চরণের অর্থ করিতে পারেন নাই। তিনি কহিয়াছেন, ‘এই চরণের অর্থগ্রহ হইল না।’ আমরা ইহার এইরূপ অর্থ করি— ‘তনু গৌরবর্ণ; কনক কটোরা[১] (অর্থাৎ স্তন) অতনু অর্থাৎ বৃহৎ, এবং কাঁচলা-উপাম, অর্থাৎ ঠিক কাঁচলির মাপে।[২]