পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪০
বাংলা শব্দতত্ত্ব

কহ সখি সাঙরি ঝামরি দেহা।
এবে ভেল বিপরীত, ঝামর দেহা।
পুনমিক চাঁদ টুটি পড়ল জনু
ঝামর চম্পক দামে।
তােহারি মুরলী সােদিগে ছােড়লি
ঝামরু ঝামরু দেহা।
কুবলয়-নীল বরণ তনু সাঙরি
ঝামরি, পিউ পিউ ভাষ।

সং ৫৪, পৃ. ৫০
সং ১৪৭, পৃ. ১২৩

সং ১৪৯, পৃ. ১২৪

সং ১৬১, পৃ. ১৩৩

সং ২১৪, পৃ. ১৭৭





 সর্বত্রই ঝামর অর্থ শুষ্ক মলিন শব্দে উক্ত হইয়াছে। এক স্থলে শ্যামের কেশ বর্ণনায় ঝামর শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে, সে স্থলে তাহার অর্থ কৃষ্ণবর্ণ হইতে পারে। সম্পাদক যদি এই পুস্তক ব্যতীত অন্য কোনাে সূত্রে অনুসন্ধান করিয়া অবগত হইয়া থাকেন যে, ঝামর অর্থে মেঘ, তাহা হইলে আমাদের আর অধিক বক্তব্য থাকে না।

‘আশ নিগড় করি জীউ কত রাখব
অবহ যে করত পয়াণ!’

 সম্পাদক ‘নিগড়’ অর্থে ‘গড়বন্দী করা’ লিখিয়াছেন। সকলেই জানেন নিগড় অর্থ শৃঙ্খল। যাহা হউক, এরূপ ভুল তেমন মারাত্মক নহে; যাঁহারা সংস্কৃত জানেন তাঁহাদের ইহাতে হানি হইবে না।

 সমস্ত পুস্তকের মধ্যে এত অসাবধানতা, এত ভ্রম লক্ষিত হয়, যে, কিয়দ্দূর পাঠ করিয়াই সম্পাদকের প্রতি বিশ্বাস চলিয়া যায়। ইহার সমস্ত ভ্রম যে কেবল সম্পাদকের অক্ষমতা বশত ঘটিয়াছে তাহা নহে, ইহার অনেকগুলি তাঁহার অসাবধানতা বশত ঘটিয়াছে। এমন-কি, স্থানে স্থানে তিনি অভিধান খুলিয়া অর্থ দেখিবার পরিশ্রমটুকুও স্বীকার করেন নাই। এত অবহেলা এত আলস্য যেখানে, সেখানে এ কাজের ভার গ্রহণ না করিলেই ভালাে হইত। আমাদের দেশে পাঠকেরা তেমন কড়াক্কড় নহেন বলিয়া তাঁহাদিগকে বিপথে চালন করিয়া লইয়া যাওয়া নিতান্ত অনুচিত। সম্পাদকের প্রশংসনীয় উদ্যোগ সত্ত্বেও আমরা তাঁহাকে যে এত কথা বলিলাম, তাহার কারণ বিদ্যাপতির কবিতা আমাদের অতি প্রিয় সামগ্রী, এবং পাঠকসাধারণকে আমরা উপেক্ষণীয় মনে করি না। আমরা এই প্রাচীন কাব্য-সংগ্রহের উদ্যোগকে উৎসাহ দিই। আমাদের ইচ্ছা,