পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৪
বাংলা শব্দতত্ত্ব

শব্দ হইতে রূপান্তরিত হইয়াছে, এমন অনুমান করিবার কোনো কারণ নাই। আর-একটা বলা যায়— ঢ্যাঁঁচ। ‘ঢ্যাঁঁচ’ করিয়া দেওয়া। এ শব্দ সম্বন্ধেও পূর্বকথা খাটে। অতএব এটাকে নিয়ম বলিয়া মানিতে পারি না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গবাসী পাঠকেরা কাল্পনিক শব্দবিন্যাস দ্বারা চেষ্টা করিয়া দেখিবেন, চ-এর পূর্বে বিশুদ্ধ এ-কার উচ্চারণ জিহ্বার পক্ষে কেমন সহজ বোধ হয় না। এখানে বলা আবশ্যক, আমি দুই অক্ষয়ের কথা লইয়া আলোচনা করিতেছি।

  পূর্বনিয়মের দুটো-একটা ব্যতিক্রম আছে। কোনো পাঠক যদি তাহার কারণ বাহির করিতে পারেন তো সুখী হইব। এদিকে ‘ভেক’ উচ্চারণে কোনো গোলযোগ নাই, অথচ ‘এক’ শব্দ উচ্চারণে ‘এ’স্বর বিকৃত হইয়াছে। আর একটা ব্যতিক্রম— লেজ (লাঙ্গুল)। তেজ শব্দের একার বিশুদ্ধ, লেজ শব্দের একার বিকৃত।

  বাংলায় দুই শ্রেণীর শব্দদ্বিগুণীকরণ প্রথা প্রচলিত আছে:

  ১। বিশেষণ ও অসমাপিকা ক্রিয়াপদ; যথা, বড়ো-বড়ো ছোটো-ছোটো বাঁকা-বাঁকা নেচে-নেচে গেয়ে-গেয়ে হেসে-হেসে ইত্যাদি।

  ২। শব্দানুকরণমূলক বর্ণনাসূচক ক্রিয়ার বিশেষণ। যথা, প্যাঁঁটপ্যাঁঁট টীঁঁটীঁঁ খিট-খিট ইত্যাদি।

  এই দ্বিতীয় শ্রেণীর দ্বিগুণীকরণের স্থলে পাঠক কুত্রাপিও আদ্যক্ষরে একার সংযোগ দেখিতে পাইবেন না। গাঁঁগাঁ গোঁগোঁ চীঁঁচীঁঁ চ্যাঁঁচ্যাঁঁ টুকটুক পাইবেন, কিন্তু গেঁগেঁঁ চেঁঁচেঁঁ কোথাও নাই। কেবল নিতান্ত যেখানে শব্দের অবিকল অনুকরণ সেইখানেই দৈবাৎ একারের সংস্রব পাওয়া যায়, যথা, ঘেউঘেউ। এইরূপ স্থলে অ্যাকারের প্রাদুর্ভাবটাই কিছু বেশি; যথা, ফ্যাঁঁসফ্যাঁঁস খ্যাঁঁকখ্যাঁঁক স্যাঁঁৎস্যাঁঁৎ ম্যাড়ম্যাড়।

  এই শব্দগুলিকে বিশেষণে পরিণত করিলে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথমে অ্যাকারের পরিবর্তে একার সংযুক্ত হয়; যথা, স্যাঁঁৎসেঁতে ম্যাড়মেড়ে। তাহার কারণ পূর্বেই আভাস দিয়াছি। স্যাঁঁৎসেঁতিয়া হইতে স্যাঁঁৎসেঁতে হইয়াছে। বলা হইয়াছে ইকারের পূর্বে ‘এ’ উচ্চারণ বলবান থাকে।

  ক্রিয়াপদজাত বিশেষ শব্দের একারের উচ্চারণ সম্বন্ধে একটি বিশেষ নিয়ম সন্ধান করা আবশ্যক। দৃষ্টান্তস্বরূপে দেখো, খেলা এবং গেলা (গলাধঃকরণ); ইহাদের প্রথমাক্ষরবর্তী একারের উচ্চারণভেদ দেখা যায়। প্রথমটি খ্যালা, দ্বিতীয়টি গেলা।