পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -দ্বিতীয় সংস্করণ.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বীমসের বাংলা ব্যাকরণ q○・ কিন্তু এই সকল নিয়মের মধ্যে অনেক সূক্ষ্মতা আছে । আমরা বন, মন, ক্ষণ প্রভৃতি শব্দকে “বোন” “মোন” “খোন” রূপে উচ্চারণ করি, কিন্তু তিন অক্ষরের শব্দের বেলায় তাহার বিপৰ্য্যয় দেখা যায়। তনয়, জনম, ক্ষণেক প্রভৃতি তাহার দৃষ্টান্ত । আশা করি বাংলার এই উচ্চারণের বৈচিত্র্য ও তাহার নিয়ম নির্ণয়কে আমাদের শিক্ষিত ব্যক্তিগণ তুচ্ছ জ্ঞান করিবেন না। বীম সাহেব লিখিতেছেন–সিলেবলের (syllable ) শেষে অ-স্বরের লোপ হইয়া হসন্ত হয় । কলসি ও ঘটকী শব্দ তিনি তাহার উদাহরণ স্বরূপ প্রয়োগ করিয়াছেন । লিখিত এবং কথিত বাংলার ব্যাকরণে প্রভেদ আছে । বীমসের ব্যাকরণে কোথাও ব| লিখিত বাংলার কোথাও বা কথিত বাংলার নিয়ম নিদিষ্ট হওয়ায় অনেক স্থলে বিশৃঙ্খলা ঘটিয়াছে । সাধুভাষায় লিখিত সাহিত্যে আমরা ঘটকী শব্দের ট হইতে অকার লোপ করি না । অপর পক্ষে বীম্স্ সাহেব যে নিয়ম নির্দেশ করিয়াছেন, তাহ, কী কথিত, কী লিখিত কোনো বাংলাতেই সৰ্ব্বত্র খাটে না । জনরব, বনবাস, বলবান, পরচর্চ প্রভৃতি শব্দ তাহার উদাহরণ। এস্থলে প্রথম সিলেবল-এ সংযুক্ত অকারের লোপ হয় নাই ; অথচ বিচ্ছিন্ন করিয়া লইলে জন, বন, বল, এবং পর শব্দের শেষ অকার লুপ্ত হইয়া থাকে। কলস দুই সিলেবলে গঠিত, কল+অস, কিন্তু প্রথম সিলেবলের পরবর্তী অকারের লোপ হয় নাই । ঘটক শব্দের দুই সিলেবল ঘটু-+ অক্‌ এখানেও অকার উচ্চারিত হয় ।