আশীর্ব্বাদ করিলেন; ঈশ্বর কহিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর, আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের পক্ষিগণের উপরে, এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর। ২৯ঈশ্বর আরও কহিলেন, দেখ, আমি সমস্ত ভূতলে স্থিত যাবতীয় বীজোৎপাদক ওষধি ও যাবতীয় সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ তোমাদিগকে দিলাম, তাহা তোমাদের খাদ্য হইবে। ৩০আর ভূচর যাবতীয় পশু ও আকাশের যাবতীয় পক্ষী ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় কীট, এই সকল প্রাণীর আহারার্থ হরিৎ ওষধি সকল দিলাম। তাহাতে সেইরূপ হইল। ৩১পরে ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে ষষ্ঠ দিবস হইল।
২১এইরূপে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী এবং তদুভয়স্থ সমস্ত বস্তুব্যূহ সমাপ্ত হইল। ২পরে ঈশ্বর সপ্তম দিনে আপনার কৃত কার্য্য হইতে নিবৃত্ত হইলেন, সেই সপ্তম দিনে আপনার কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন। ৩আর ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে আশীর্ব্বাদ করিয়া পবিত্র করিলেন, কেননা সেই দিনে ঈশ্বর আপনার সৃষ্ট ও কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন।
৪সৃষ্টিকালে যে দিন সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবী ও আকাশমণ্ডল নির্ম্মাণ করিলেন, তখনকার আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী বৃত্তান্ত এই। ৫সেই সময়ে পৃথিবীতে ক্ষেত্রের কোন উদ্ভিজ্জ হইত না, আর ক্ষেত্রের কোন ওষধি উৎপন্ন হইত না, কেননা সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষান নাই, আর ভূমিতে কৃষিকর্ম্ম করিতে মনুষ্য ছিল না। ৬আর পৃথিবী হইতে কুজ্ঝটিকা উঠিয়া সমস্ত ভূতলকে জলসিক্ত করিল। ৭আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে [অর্থাৎ মনুষ্যকে] নির্ম্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন; তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী হইল।
৮আর সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্ব্বদিকে, এদনে, এক উদ্যান প্রস্তুত করিলেন, এবং সেই স্থানে আপনার নির্ম্মিত ঐ মনুষ্যকে রাখিলেন। ৯আর সদাপ্রভু ঈশ্বর ভূমি হইতে সর্ব্বজাতীয় সুদৃশ্য ও সুখাদ্য-দায়ক বৃক্ষ, এবং সেই উদ্যানে মধ্যস্থানে জীবনবৃক্ষ ও সদসদ্-জ্ঞান-দায়ক বৃক্ষ, উৎপন্ন করিলেন। ১০আর উদ্যানে জলসেচনার্থে এদন হইতে এক নদী নির্গত হইল, উহা তথা হইতে বিভিন্ন হইয়া চতুর্ম্মুখ হইল। ১১প্রথম নদীর নাম পীশোন; ইহা সমস্ত হবীলা দেশ বেষ্টন করে, তথায় স্বর্ণ পাওয়া যায়,
১২আর সেই দেশের স্বর্ণ উত্তম, এবং সেই স্থানে গুগ্গুলু ও গোমেদকমণি জন্মে।১৩দ্বিতীয় নদীর নাম গীহোন; ইহা সমস্ত কূশ দেশ বেষ্টন করে। ১৪তৃতীয় নদীর নাম হিদ্দেকল, ইহা অশূরিয়া দেশের সম্মুখ দিয়া প্রবাহিত হয়। চতুর্থ নদী ফরাৎ।
১৫পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে লইয়া এদনস্থ উদ্যানের কৃষিকর্ম্ম ও রক্ষার্থে তথায় রাখিলেন। ১৬আর সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে এই আজ্ঞা দিলেন, তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও; ১৭কিন্তু সদসদ্-জ্ঞান-দায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।
১৮আর সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, মনুষ্যের একাকী থাকা ভাল নয়, আমি তাহার জন্য তাহার অনুরূপ সহকারিণী নির্ম্মাণ করি। ১৯আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকা হইতে সকল বন্য পশু ও আকাশের সকল পক্ষী নির্ম্মাণ করিলেন; পরে আদম তাহাদের কি কি নাম রাখিবেন, তাহা জানিতে সেই সকলকে তাঁহার নিকটে আনিলেন, তাহাতে আদম যে সজীব প্রাণীর যে নাম রাখিলেন, তাহার সেই নাম হইল। ২০আদম যাবতীয় গ্রাম্য পশুর ও খেচর পক্ষীর ও যাবতীয় বন্য পশুর নাম রাখিলেন, কিন্তু মনুষ্যের জন্য তাঁহার অনুরূপ সহকারিনী পাওয়া গেল না। ২১পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ঘোর নিদ্রায় মগ্ন করিলে তিনি নিদ্রিত হইলেন; আর তিনি তাঁহার একখান পঞ্জর লইয়া মাংস দ্বারা সেই স্থান পূরাইলেন। ২২সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম হইতে গৃহীত সেই পঞ্জরে এক স্ত্রী নির্ম্মাণ করিলেন ও তাঁহাকে আদমের নিকটে আনিলেন। ২৩তখন আদম কহিলেন, এবার [হইয়াছে]; ইনি আমার অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস; ইহাঁর নাম নারী হইবে, কেননা ইনি নর হইতে গৃহীত হইয়াছেন। ২৪এই কারণ মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে। ২৫ঐ সময়ে আদম ও তাঁহার স্ত্রী উভয়ে উলঙ্গ থাকিতেন, আর তাঁহাদের লজ্জা বোধ ছিল না।
৩১সদাপ্রভু ঈশ্বরের নির্ম্মিত ভূচর প্রাণীদের মধ্যে সর্প সর্ব্বাপেক্ষা খল ছিল। সে ঐ নারীকে কহিল, ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানে কোন বৃক্ষের ফল খাইও না? ২নারী সর্পকে কহিলেন, আমরা এই উদ্যানস্থ বৃক্ষ সকলের ফল খাইতে পারি; ৩কেবল উদ্যানের মধ্যস্থানে যে বৃক্ষ আছে, তাহার ফলের বিষয় ঈশ্বর বলিয়াছেন, তোমরা তাহা ভোজন করিও না, স্পর্শও করিও না, করিলে মরিবে। ৪তখন সর্প নারীকে কহিল, কোন ক্রমে মরিবে না;
৫কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান