পাতা:বাখতিন - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তাত্ত্বিকের মৌলিক ভাবপ্রস্থান সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এরা প্রত্যেকেই সমান্তরাল অপর চিন্তা-পরিসরের সূত্রধার হিসেবে বাখতিন-অনুধ্যানকেই গভীরতর ও শানিততর করেছেন যেন।

 তাই এই লিখন-প্রয়াসীর যে-বইটি বাখতিন সম্পর্কে প্রথম পূর্ণাঙ্গ (এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র) বাংলা বই, তার সম্পূরক কিছু রচনা অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। প্রধানত ছোট পত্রিকার সহযোগী লিখন-যোদ্ধাদের আগ্রহে তৈরি হলো কিছু প্রবন্ধ। সময় ও পরিসরের উত্তাপ কিংবা দহন থেকে যে-বিহ্বলতা তৈরি হয়েছে সর্বত্র, বাখতিনের পুনঃপাঠ সূত্রে তার মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করেছি। বুঝতে চেয়েছি, বাস্তু-চিহ্ন-কৃত্য যখন তাদের ভাবনা-ধারণা-নির্যাস-উৎস-পরিণতি-মূল্যমান-পরম্পরা-অন্বিষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে যায় বাখতিনীয় পার্থক্য-প্রতীতি এবং দ্বিবাচনিকতা কি সত্যিই কূটাভাসের গোলকধাধায় হারিয়ে যায়! অথবা প্রত্যুত্তর-যোগ্যতার সম্ভাবনা ও তাৎপর্যকে বহুদূর অবধি প্রসারিত করে নিরবচ্ছিন্ন নির্মিতির অধ্যবসায়ে মগ্ন হতে হয়! বাখতিন কি এই ক্রান্তিকালেও আমাদের এই পাঠ দেন না যে অস্তিত্বের সংজ্ঞা ও অন্বিষ্ট পুনর্নির্ণয়ের প্রক্রিয়া নতুন পরিস্থিতিতে নতুনভাবে শুরু হয় মাত্র?

 নিশ্চয়। নতুন নতুন আরম্ভের শেষ নেই কোনও। সহযোগী সত্তার উপস্থিতি সম্পর্কে সংশয়ের কারণ নেই। তাই তিনদশক ধরে সাংস্কৃতিক যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছেন যিনি, ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকার স্বনামধন্য সেই সেনাপতি, অনিল আচার্য, আমার বাখতিন-পাঠ সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন। একজন লিখন-কর্মীর কক্ষে এই তো বড়ো পুরস্কার যে অনুষ্টুপ প্রকাশনীর শ্লাঘ্য তালিকায় তার উদ্যমও অন্তর্ভুক্ত হলো। তাহলে, বাখতিন ঠিক, কোনও অধ্যবসায়ই হারিয়ে যায় না পুরোপুরি, আসন্ন ভবিষ্যতে দ্বিরালাপের পরবর্তী বিকাশের প্রক্রিয়ায় এই উদ্যমও তাৎপর্য নির্ণয়ের অন্তর্বর্তী পর্যায় হিসেবে স্বীকৃত হবে। আসলে সর্বব্যাপ্ত বিয়োগপর্বের কুহকে যত আচ্ছন্নতাই আসুক, সংযোগশূন্য ও মানবিক অভিকর্ষহীন চরম পরিস্থিতি কখনও তৈরি হতে পারে না। সব কিছুই রাজনৈতিক এখন, তাই আলাদা ভাবে কোনও পরিসরে রাজনীতি খুঁজতে হয় না। সব কিছুই চিহ্নায়ক যখন, আলাদা ভাবে চিহ্নায়ন প্রকরণ কোথায় খুজব? তেমন-ই সব কিছুই এখন সাংস্কৃতিক—হ্যাঁ, সর্বত্রব্যাপ্ত পীড়া-সংক্রমণ সত্ত্বেও—অতএব সংস্কৃতির যুদ্ধক্ষেত্র আলাদা ভাবে খুঁজতে হয় না।

 বাখতিন-পাঠের সময়োপযোগী নিষ্কর্ষ অনুশীলনে এই বইটি যদি গ্রহীতা-পাঠকদের সহযোগী হিসেবে পায়, তাদের চিন্তাবিশ্বে একটুও শরিক হতে পারে—তাহলে উদ্যমকে সার্থক মনে করব। তবে চিন্তা ও কৃত্য যেহেতু চূড়ান্ত হয় না কখনও, এই প্রতিবেদন পরবর্তী কোনও সন্দর্ভের পূর্বলেখ বলে বিবেচিত হোক॥

 কলকাতা বইমেলা
 ফেব্রুয়ারি, ২০০২
তপোধীর ভট্টাচার্য।
১৩