পাতা:বাখতিন - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করা অসম্ভব। তাই বিমূর্তায়নের ‘অভিজাত’ পথ অনুসরণ না করাতে আপাত-দৃষ্টিতে যে অবনমন ঘটেছে, তা ইতিবাচক অস্তিত্বের ঘোষণা। ইতিবাচক এইজন্যে বলছি যে কার্নিভালের উৎসাহ ও সজীবতা লালিত চিত্রকল্পে ও চিহ্নায়কে মানুষের নির্মল ও অকৃত্রিম অস্তিত্ব পুনর্জীবিত ও পুনর্নবায়িত হয়ে থাকে। রাবেলের রচনায় এটাই ঘটেছে। বাংলা সাহিত্যের পাঠ-অভিজ্ঞতা থেকে আমরাও অনুরূপ সিদ্ধান্তে আসতে পারি।

 তথাকথিত শিষ্ট সাহিত্য যখন স্পর্শভীরু দূরত্বে গিয়ে কোলাহল-মুখর জনারণ্য সম্পর্কে স্পষ্ট তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে, কার্নিভালের উপাদান সব নিষেধের গণ্ডি ভেঙে দেয়। হাটে-বাজারে, জনারণ্যে যেসব ভাষা ও ভঙ্গি প্রচলিত, তাদের স্বচ্ছন্দে বয়ানে নিয়ে আসে। উচ্চসংস্কৃতির অহংকার ও শুচিতাবোধ চূর্ণ করে যেন পাতাল থেকে তুলে আনে লোকায়ত জীবনের সুপ্ত প্রস্রবণ। অপরিচিতকে পরিচিত করার ফলে প্রেক্ষিত ও প্রসঙ্গের মধ্যে অজস্র বিনিময় ও বিকল্পায়ন যুগপৎ সম্ভব হয়ে ওঠে। প্রাতিষ্ঠানিক বিন্যাসগুলির মধ্যে অন্তর্ঘাত করে নানা ধরনের প্রতিন্যাস। পুরোনো আকরণ এমন ভাবে বিনির্মিত হয়ে যায় যে পাঠকৃতির বহির্বৃত ঐক্য ধ্বস্ত হয়ে পড়ে। আবার পরক্ষণেই জেগে ওঠে অভিনব পুনর্নির্মাণের সম্ভাবনা। ইতিহাসকে যারা ভয়াবহ ভাবে খণ্ডিত করতে চাইছিল, তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করে কোনো জনগোষ্ঠীর সার্বিক ইতিহাসের অসামান্য ব্যাপ্তি ও গভীরতা ব্যক্ত হতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় কার্নিভালের হাসি ও শ্লেষ অভাবনীয় তাৎপর্যের দ্যোতনা বয়ে আনে। সরকারি অবস্থানের উদ্ধত একমাত্রিকতা ও সীমাবদ্ধতা জনিত নিরানন্দ পরিসর কার্নিভালের ধারাবাহিক উপস্থিতিতে কেটে যেতে থাকে। সুতরাং একটু আগে যাকে অবনমন বলেছি, তা আসলে প্রতীয়মান মাত্র; অমোঘ ও নিবিড় দ্বিবাচনিকতার সূত্রে জীবন পুনরাবিষ্কৃত হয় বলেই আমরা বরং লক্ষ করি ঊর্দ্ধায়নের প্রক্রিয়া! তবে তাকে অনুভব করতে হয় কার্নিভালের দ্বিবাচনিক উদ্ভাসনের সূত্রে। সরকারি অবস্থান যেহেতু চরিত্রগত ভাবে আধিপত্যবাদী, জগৎ ও জীবনের একবাচনিক আকল্প চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তা প্রবল উৎসাহী ও অনমনীয়। এর মোকাবিলা করায় লোকসমাজের উদ্যম এইজন্যে সাংস্কৃতিক রাজনীতির আওতায় পড়ে।


চার

ডস্টয়েভস্কির নন্দন সংক্রান্ত আলোচনায় বাখতিন দ্বিবাচনিকতার পরম্পরার উৎস খুঁজে পেয়েছেন সুদূর অতীতে, যখন লোকবৃত্ত থেকে স্বত-উৎসারিত শ্রুতি সাহিত্য আদিম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরের অজস্র উপাদান বয়ে নিয়ে যেত মোহনার দিকে ধাবমান স্রোতধারাকে পুষ্ট ও ঋদ্ধ করার জন্যে। তিনি লক্ষ করেছেন, সক্রেটিসের দ্বিরালাপমূলক প্রতিবেদনে এই প্রক্রিয়ার আদি সংরূপ পাওয়া যাচ্ছে। লোকায়ত কার্নিভাল দ্যোতক বিতর্ক থেকে সক্রেটিস তাঁর দ্বিরালাপ গড়ে তোলার প্রেরণা পেয়েছিলেন। এ সম্পর্কে বাখতিনের মন্তব্য খুব গুরুত্বপূর্ণ: ‘Folk-carnival debates between life and death, darkness and light, winter and summer etc. permeated with the pathos and change and the joyful relativity of all things, debates which did not permit thought to stop and congeal in an one-sided seriousness or in a stupid fetish for definition or singleness of meaning—all this lay at the base of

৯৪