পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

কল্পনা বাদে বাস্তব কিম্বা বাস্তব বাদে কল্পনার ছবি রেখে যান নি। গানের সুর সম্পূর্ণ কাল্পনিক জিনিষ কিন্তু এই বাস্তব জগতের বায়ুতরঙ্গের উপর তার প্রতিষ্ঠা হ’ল, কথার ছবির সঙ্গে সে আপনাকে মেলালে তবে সে সঙ্গীত হয়ে উঠলে,—অনাহত আপনাকে করলে আহত বাতাস ধরে, কিন্তু হরবোলার বুলি বাস্তব জগতের সঠিক শব্দগুলোর প্রতিধ্বনি দিলে সেইজন্য সে সঙ্গীত হওয়া দূরের কথা খুব নিকৃষ্ট যে টপ্পা তাও হ'ল না। বাস্তবকে কল্পনা থেকে কতখানি সরালে কিম্বা কল্পনাকে বাস্তব থেকে কতটা হঠিয়ে নিলে art হয় এ তর্কের মীমাংসা হওয়া শক্ত, কিন্তু কল্পনার সঙ্গে বাস্তব, চোখে-দেখা জগতের সঙ্গে মনে-ভাবা জগতের মিলন না হলে যে art হবার জো নেই এটা দেখাই যাচ্ছে। “One of the hardest thing in the world is to determine how much realism is allowable to any particular picture.” —Burn Jones. এই হ’ল ইংলণ্ডের প্রসিদ্ধ চিত্রকর Burn Jonesএর কথা। অনেক দিন ধরে চিত্র এঁকে যে জ্ঞান লাভ করলেন শিল্পী তারি ফলে বুঝলেন যে বস্তুতন্ত্রতা ছবিতে কতখানি সয় তা ঠিক করা মুস্কিল। ইংরেজ শিল্পী এখানে কোন মত দিলেন না, ছবি আঁকতে গেলে সবারই যে প্রশ্ন সামনে উদয় হয় তাই লিখলেন, কিন্তু আমাদের দেশে মত দেওয়া যেমন সুলভ, মত ধরে চলাও তেমনি সাধারণ—কে চিত্রবিদ তার সম্বন্ধে পরিস্কার মত, কি চিত্র তারও বিষয়ে পাকা শেষ মত প্রচারিত হ’ল এবং সেই সব মতের চশমা পরে’ ভারতবর্ষের চিত্রকলার আদর্শগুলোর দিকে চেয়ে দেখে’ অজন্তার শিল্পও আমাদের শ্রদ্ধেয় অক্ষয়চন্দ্র মৈত্র মহাশয়ের চোখে কি ভাবে পড়লে তার পরিষ্কার ছবি কার্তিক সংখ্যার প্রবাসীর কষ্টিপাথর থেকে তুলে দিলেম—“যাহা ছিল তাহা নাই। যাহা আছে সেই অজন্তাগুহার চিত্রাবলী, তাহাতে যাহা আছে, তাহা কিন্তু চিত্র নহে চিত্রাভাস। তাহা পুরাতন ভারতচিত্রের অসম্যক্ নিদর্শন, চিত্র-সাহিত্যদর্পণের দোষ-পরিচ্ছেদের অনায়াসলভ্য উদাহরণ। তাহা কেবল বিলাসব্যসনমুক্ত যোগযুক্ত অনাসক্ত সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের নিভৃত নিবাসের ভিত্তি বিলেপন...ভারতচিত্রোচিত প্রশংসা লাভের অনুপযুক্ত। তাহা এক শ্রেণীর পূর্ত কর্ম ...তাহাতে যাহা কিছু চিত্রগুণের পরিচয় পাওয়া যায় তাহা অযত্নসম্ভূত