পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



শিল্পশাস্ত্রের ক্রিয়াকাণ্ড

 মানব-শিল্পের শৈশবটা কাটলো মানুষের ঘরের এবং বাইরের খুব দরকারী কায করতে। পাথর ঘসে’ তীরের ফলা তৈরি করা, হাঁড়িকুঁড়ি গড়া, কাপড় বোনা, হাড়ের মালা গাঁথা, লোহার বালা গড়া, শীতের কম্বল বসবার আসন—এমনি নানা জিনিষের উপরে শিল্পের ছাপ পড়লো। নানা জিনিষ প্রস্তুতের নানা প্রক্রিয়া আস্তে আস্তে দখল হয় মানুষের। মানুষ সভ্যতার দিকে যখন এগোলো তখন কতক শিল্পকলা রইলো ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে, কতক রইলো রাজসভার সঙ্গে জড়িয়ে। প্রধানতঃ এই দুই রাস্তা ধরে শিল্পের ক্রিয়াকাণ্ড চল্লো সব দেশেই। পূজোর জন্য যে সব মন্দির প্রতিমা ইত্যাদি তাদের প্রস্তুত করার নানা প্রকরণ এবং প্রাসাদ নির্মাণ, হাট বসানো, কূয়ো খোঁড়া ইত্যাদির নানা কথা সংগ্রহ হয়ে পণ্ডিতদের দ্বারা শিল্পশাস্ত্রে ধরা হ’ল, নানা শিল্প বিষয়ে নানা কথা নানা অধ্যায়ে বিভক্ত হয়ে শাস্ত্রের মধ্যগত রইলো—এই হ’ল শিল্পশাস্ত্রের গঠনের মোটামুটি হিসেব। তারপর ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ এই চার শাস্ত্রের মধ্যে মধ্যে আনুষঙ্গিকভাবে নানা শিল্পকলার কথাও বলা হ’ল এবং আংশিকভাবে নানা পুরাণেও প্রসঙ্গক্রমে শিল্পের এবং নানা কলাবিদ্যার কথা লেখা রইলো।

 শিল্পশাস্ত্রের মূল গ্রন্থ সব যা ছিল বলেই শুনি, সেই সব প্রাচীন শাস্ত্রের সারসংগ্রহ বলে’ যে সব পুঁথি নানা কালে এ-দেবতা ও-ঋষি বা অমুক তমুকের কথিত বলে’ লেখা হ’ল—রাজরাজড়ার পুস্তকাগারে ধরার জন্য সেইগুলোই কতক কতক এখন পাওয়া যাচ্ছে। তা থেকে দেখা যায় যে, ধর্মের সেবায় শিল্পের যে সব দিক জড়িয়ে ছিল তারি বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ হ’ল কিন্তু অন্যান্য কলা যা সৌখিন রাজরাজড়ার সেবায় লাগতো তাদের বিস্তারিত বিবরণ লেখাই গেল না। পূজার প্রতিমা কেমন করে’ করতে হবে তার ঠিকঠাক নিয়ম লক্ষণ সমস্তই পাই, কিন্তু কাপড়-চোপড় নানা গন্ধতৈল নানা মূল্যবান তৈজসপত্র এদের প্রস্তুতের প্রকরণ শিল্পশাস্ত্রে দেখি ক্বচিৎ ধরা হ’ল। এ ধরণের সামগ্রীর মধ্যে এক বজ্রপ্রলেপের কথা লেখা আছে দেখি সব শিল্পশাস্ত্রে, কিন্তু বজ্রমণির বেলায় তার ধারণের কি গুণাগুণ তার বর্ণ ও মূল্যাদির হিসেব হ’ল ধরা কিন্তু বজ্রমণিটা বিদ্ধ