পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পীর ক্রিয়াকাণ্ড
১৬৫

সুরকীর কায করে' দেবায়তন রাজপ্রাসাদ এমনি সব বড় বড় কারাগারের প্রকাণ্ড প্রাকার খাড়া করে' তুলতে এবং রসের শতমুখী ধারার ক্রিয়া ও ক্রীড়ার মুখে ভীষণ শক্ত বাঁধ বাঁধতে। এই নিরেট বাঁধ যদি কোনদিন ভাঙলো তো রস আবার ছুটলো, নয়ত নিষ্ক্রিয় শিল্পকুণ্ডের জলের মতো কিছুদিন থাকলো এবং অবশেষে একদিন শুকিয়ে গেল, —কেবল বাঁধগুলো পড়ে' রইলো এক ফোঁটা রসের শোচনীয় অবসানের সাক্ষী দিয়ে।

 দেশের বিদেশের কলাবিদ্যাসমূহের এমন এক একটা সঙ্কটাপন্ন অবস্থার দেখা পাওয়া যাচ্ছে যখন কারিগর বেঁচে আছে, কিন্তু art কোথাও নেই দেশে। Artএর দিক দিয়ে অনুর্বর ক্ষেত্রে খরার দিনের মধ্য দিয়ে চলা কোন জাতিই এড়াতে পারেনি। এই রসহীনতার মধ্যে ক্রিয়া করে চলার শ্রান্তি সব জাতির সব আর্টিষ্টদের কাযের উপরে সুস্পষ্ট ছাপ রেখে গেছে দেখতে পাই, আরো দেখি যখন আট বর্তমান নেই জাতির মধ্যে তখনই জাগছে তার প্রাণে যা ছিল তার জন্য বেদনা এবং যা আসার সম্ভব ভবিষ্যতে তার জন্যে বিষম তৃষ্ণা! যারা ক্রিয়াবান তারা ভূত ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান তিনের মধ্য দিয়ে ক্রিয়া করে চলে, যারা তা নয় কিন্তু কিছু করতেও চায় তারা হয় ভূত নয় ভবিষ্যৎ এমনি একটা কিছুতে গ্রস্ত হয়ে থাকে। নতুন এল, পুরোনো কেউ জায়গা আটকে বসলো না, নতুনকে বড় হবার দিকে অগ্রসর করে' দিলে— এইটেই হ’ল স্বভাবের নিয়ম, এ যেন কত কালের আসবাব আবর্জনায় ঠাসা পুরোনো বাড়িতে নতুন ছেলেরা জন্ম নিয়ে ক্রীড়া সুরু করে' দিলে। সেকালের খেলনা একালের ছেলের খেলবার কাজে এল,—ছেলে ভাঙলে অনেক জিনিষ কিন্তু এই ভাঙা-চোরার মধ্য দিয়ে ক্রিয়া ও ক্রীড়া সুরু হয়ে গেল। পুরোনোর কোলে নতুনের লীলা এটা প্রাচীন গম্ভীর লোকদের না-পছন্দের ব্যাপার, কেননা একালটাকেও সেকাল হিসেবে না দেখতে পেলে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে ব্যাঘাত ঘটে, চারিদিকের বাঁধা দস্তুরের মধ্যে ওলট পালট অশান্তি এলে তাদের অসোয়াস্তির সীমা থাকে না, এইজন্য নতুনের ক্রিয়ার সঙ্গে, পুরাতনের ক্রিয়ার কোন কোন স্থলে একটা সংঘাত বাধে এবং হঠাৎ যদি সেকালে মূল্যবান অথচ একালে একেবারেই অকেজো এমন কিছু জিনিষ নতুন