পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পীর ক্রিয়াকাণ্ড
১৬৯

যেরূপটা হওয়া স্বাভাবিক তাই হবে এইটেই আমার ধারণা। বৌদ্ধ যুগে এবং তারপরেও দেখা যায় ধর্মে শ্রদ্ধাবান্‌ শিল্পশাস্ত্রে পণ্ডিত এবং শিল্প-ক্রিয়াতেও নিপুণ ধৰ্মযাজকগণ ভারতবর্ষের বাইরে নানা ম্লেচ্ছ জাতির মধ্যে ধর্ম-প্রচার ও সেই সঙ্গে শিল্প-প্রচারও করেছেন। ধর্মের অনুশাসন তাঁরা স্থানে স্থানে কঠিন ভাবে প্রয়োগ করেছেন সেই সব অন্যব্রতগণের উপরে কিন্তু শিল্পশাস্ত্রের নিয়মগুলো ঢিলে করে দিয়েছেন দেশে দেশে, শিল্পের দেশীয়তার সঙ্গে শাস্ত্রমতো বিশুদ্ধ শিল্পের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন —কোন বাধা দেননি সে পথে। সেকালের তাঁরা পণ্ডিত ছিলেন শাস্ত্র ও শিল্পে, কাযেই কালে কালে দেশে দেশে একই শিল্পের পুনরাবৃত্তি যে একেবারেই দোষ, বিচিত্রতাই যে শিল্পের মূল কথা, সেটা তাঁরা ভাল রকমই জানতেন। একালের ইউরোপীয় শিল্পের নিয়ম ও লক্ষণাদির সঙ্গে আমাদের art studentদের যখন মিলন হ’ল তখন নিজেদের শিল্পের জ্ঞান ছিলই না তাদের মধ্যে, সুতরাং ইউরোপের শিল্প imposed হ’তে চল্লো এদেশে, মিলন সার্থক হ’ল না শোভন হ’ল না। তেমনি সেকালের শিল্প-শাস্ত্রের বিধি-ব্যবস্থা যদি একালে imposed হয় তবে সে কার্যটা অশোভনতা এবং অকৃত্রিমতারই সৃষ্টি করবে। এরূপ impositionএর বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক দিকটায় অনেক যুদ্ধ চলেছে। চলছে, সুতরাং শিল্পেও সেকালে একালে যে স্বাভাবিক যোগ না ঘটিয়ে imposition ঘটালে বিপত্তির সম্ভাবনা তা সব দিক দিয়েই দেখতে পাচ্ছি। প্রাচীন ভারত-শিল্প শিল্পশাস্ত্র সমস্তই আমাদের এবং সেটা খুব বড় বলে’ যতই মনে করি না, সিন্দবাদের বুড়োর মতো কেবল তাকেই ঘাড়ে করে বইতে নতুন ভারতে আমরা সবাই এলেম-কবি শিল্পী গায়ক বাদক এমন কি পণ্ডিতেরাও—এটা ভাবাই স্বাভাবিক অবস্থার কাজ নয়! সেকাল একালের মধ্যে মিলে নবীনতার সৃজন করবে, গাছের পুরোনো বীজটা নতুন জীবন-রসে মিলে নতুন বীজের মধ্যে আপনাকে প্রকাশ করে যে ভাবে সেইভাবে সেকাল এগিয়ে চলবে একালের ক্রিয়ার ছন্দ ধরে' ভবিষ্যৎ কালের সফলতার দিকে,—এ না হলেই বিপদ। গাছটা তার পুরোনো বীজের খোলার মধ্যে গিয়ে ঢুকে পড়লো কিম্বা পুরোনো বীজ আপনাকে গাছের ছাঁদে মেলাতে না চেয়ে গাছের ঘাড় মটকে মাটির মধ্যে

O. P. 14–22
center
right