পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পীর ক্রিয়াকাণ্ড
১৭১

সে কি বলবে না, ‘Every thing is worth knowing: learn the art and lay it aside?”

 রসায়নশাস্ত্রে জল গ্যাস এসব তৈরীর প্রক্রিয়া বিষয়ে পরীক্ষার দায়ে সুনিশ্চিত হয়ে তবে পুঁথির মধ্যে মানুষ প্রক্রিয়ার হিসেবটা ধরলে। বই পড়ে' সেই ক্রিয়া কর ঠিকঠাক ফল নিশ্চয় পাবে। কিন্তু শিল্পশাস্ত্রের নির্দেশ ও মান-পরিমাণ মতো মূর্তি গড়লে পাথর দেবতাই হবে যে তা নয়, আট দশ হাত মনুষ্যেতর ব্যাপারও হ'তে পারে। ছন্দশাস্ত্র মতো ঠিকঠাক ছন্দ-বাঁধা জিনিষ সব সময়ে কবিতা হয় না, ঠিকঠাক লা-র-গ-ম দোরস্ত জিনিষ সব সময়ে সঙ্গীতও হয় না,—এর প্রমাণ হাতে হাতে পাই। ইতিহাস পুরাণ রূপক ইত্যাদির দিক দিয়ে লাট কর্জনের মতে আমাদের দেবমূর্তির সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই আমাদের দেবতার অথচ তার কাছে ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর সবাই মনুষ্যেতর বীভৎস কিছু। শিল্পশাস্ত্রের নিছক আইনে বলে মূর্তিগুলোর মধ্যে দেবত্ব যে আসেনি তা আইনের পিছনে থাকে বলে'। Mythology, Symbolism, মুদ্রা, রূপক ইত্যাদি এমনি সব জিনিষের শক্তি অনেকখানি কাজ করে, তবে শাস্ত্রবিধি মতে কাটা পাথরকে এ-দেবতা সে-দেবতা বলে প্রতিপন্ন করছে এটা ঠিক! মর্ত্যভূমির অনেকখানি জড়িয়ে আছে বলেই এই সব মূর্তি আমাদের কাছে সুন্দর ঠেকে। আর্টে নিছক দেবতা হ’তে পারে না—নরদেব পর্যন্ত আর্টের গতি,—এইটে আমার ধারণা। অবশ্য লাট কর্জনের মতো রূপক ইত্যাদির জ্ঞান ও সেই সঙ্গে রস-জ্ঞানেরও যার অভাব তার কথা স্বতন্ত্র, কিন্তু ইজিপ্তের রাজাদের মূর্তি, রাজার নাম রাজার ইতিহাস এ সবের অপেক্ষা না রেখে স্বাধীন ভাবেই রসিকের কাছে আপনার নরদেবত্ব প্রমাণ করছে; এবং বুদ্ধ-মূর্তি নটরাজ-মূর্তি কপিল-মূর্তি এমনি অসংখ্য মূর্তি এদেশে রয়েছে যা পুরাণের রূপক ছেড়েও নিজের মহিমা নিজের রূপ দিয়ে প্রচার করছে; সেই সব মূর্তি হচ্ছে শিল্পীর কাছে অলিখিত যে শিল্পশাস্ত্র তার বিধিনিয়ম ও প্রক্রিয়ার ফল, হাজার বছর ধরে' শিল্পশাস্ত্র মতো গড়ে' চল্লেও এ জিনিষ পাওয়া শক্ত, কেবল তারাই পেয়েছে যারা মনের মধ্যে মনের আকাশে নিজের মনের মধ্যের মানসদেবতাকে ক্রিয়ার দ্বারায় বশ করতে শিখেছে অনেক সাধনা অনেক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে।