পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

বাঁধা-ধরা যোগশাস্ত্র পড়িয়ে যোগী সৃষ্টি করা যায় না, বাঁধা-ধরা ছন্দ নিয়ে সুর নিয়ে কবিতা বা সুরকে ধরে' আনা যায় না—তা যদি হ’ত তো ভাবনা ছিল না। যে কবিতা ছিল কালিদাসের আমলে, ছন্দশাস্ত্র মতে তারি পুরাবৃত্তি চলতো, তাহলে সাহিত্য-সেবার দরকারই হত না আজকের মানুষের; শাস্ত্রের তথাকথিত রাসায়নিক প্রক্রিয়া ধরে' ছবি হ’ত কবিতা হ’ত গান হ’ত প্রস্তুত ঠিক কালিদাসের মতো তানসেনের মতো দেবী চিত্রলেখার মতো। কিন্তু সৌভাগ্য যে এটা ঘটা সম্ভব হ’ল না, শিল্পীর intention বা ধ্যান তারি অনুপাতে ক্রিয়া চল্লো, কর্মের ভাবভঙ্গি মান-পরিমাণ সব সেই intention ও তার ক্রিয়া বশে হ’ল,—জিনিষটা দেবতার ছাঁদ পেলে কি মানুষের ছাঁদ পেলে, নবতাল হ’ল কি দশতাল হ’ল। দেবতা হ’লেই নবতাল, নর হ’লেই অষ্টতাল ইত্যাদি শাস্ত্রের বাঁধা যে নিয়ম intention ও তার ক্রিয়ার বশে কায করে, সে নিয়ম শিল্পী মাত্রেই ভাঙলে বদলালে, প্রাচীন ভারত-শিল্পের ইতিহাস থেকেও এটা সপ্রমাণ করা শক্ত নয়, একালে তো এটা নিত্য ঘটনায় দাঁড়িয়েছে। নিছক শিল্প-ক্রিয়া থেকেই ঠিকঠাক ছন্দ সুর ছাঁদ বাঁধ সমস্তই বেরিয়েছে একদিন একথা যদি অস্বীকার করি তবে শাস্ত্রকেও অস্বীকার করা হয়, কেননা শাস্ত্রই বলেছেন— ব্রহ্মা অদ্ভূত সমস্ত যা তার দেবতা, তাঁর থেকে সুর এসেছে, ছন্দ এসেছে, সৃষ্টি এসেছে—তিনি কোন বাঁধা শাস্ত্র দেখে সৃষ্টি-ক্রিয়া করে চলেন নি। যে নিয়মে শিল্পী সুরূপ কুরূপ গড়ে—কিম্বা সুভাব কুভাব দেবভাব মানুষভাব রাক্ষসভাব আসে কাযে, তার প্রক্রিয়া ও হিসেব সম্পূর্ণভাবে শিল্পীর নিজস্ব জিনিষ—শাস্ত্রের মধ্যে তার হিসেব ধরা নেই। মূর্তির আধ্যাত্মিকতা শাস্ত্রে লেখা মাপজোখ নিয়ে ধরা যায় না, শিল্পীর আত্মায় তার ব্যক্ত করার হিসেবের পুঁথিটা লুকানো আছে—সেই পুঁথি অনুসারে ক্রিয়া করে' চলে’ শিল্পী নানা কাণ্ড বাধিয়ে যায় যার হিসেব শুধু ক্রিয়াবানদের কাছেই ধরা পড়ে।